নিজস্ব প্রতিবেদক।।জীবদ্দশায় নিজের জন্য কবর খনন করলেন ঠাকুরগাঁওয়ের ব্যবসায়ী ঠাকুরগাঁওয়ের ব্যবসায়ী ডক্টর গোলাম আল ফারুক তার জীবদ্দশায় নিজের জন্য কবর খনন করলেন।
বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গাছগাছালিতে ঘেরা নিরিবিলি পরিবেশ। চারপাশে সুনশান নীরবতা, যেন প্রকৃতি নিজেও কোনো অদৃশ্য রহস্যকে লুকিয়ে রেখেছে। সেই নীরবতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে এক ব্যতিক্রমী মাটির ঘর। উভমুখী দরজা-জানালা বিশিষ্ট ছোট্ট ঘরটির ভেতরে প্রবেশ করলে চোখ আটকে যায় অদ্ভুত এক দৃশ্যে—ঘরের ভেতরে মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে একটি কবর। আর সেই কবরের ওপর খাটিয়ায় বিছানো আছে কোলবালিশ ও সাদা চাদর।
এটি কোনো সিনেমার দৃশ্য নয়। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালান্দর ইউনিয়নের কচুবাড়ি-কৃষ্টপুর গ্রামের এক বাস্তব চিত্র। এখানে খামারবাড়িতে নিজের জীবদ্দশাতেই কবর খুঁড়ে রেখেছেন ডক্টর গোলাম আল ফারুক নামের এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী।
স্থানীয় লোকজন জানালেন, দীর্ঘদিন ধরে ধর্মপ্রাণ এই ব্যবসায়ী গ্রামের মানুষের কাছে উদারতা ও দানশীলতার জন্য পরিচিত। তবে সম্প্রতি তাঁর এই উদ্যোগ এলাকায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জীবিত থাকতেই নিজের কবর খুঁড়ে রাখা—এমন ঘটনা অনেকের কাছেই অস্বাভাবিক মনে হলেও ফারুক সাহেবের কাছে এটি ছিল শেষ জীবনের শান্তির প্রস্তুতি।
তিনি স্থানীয় লোকদের বলতেন, “মৃত্যু অনিবার্য, তাই আগে থেকেই নিজের শেষ ঠিকানার ব্যবস্থা করে রাখা উচিত। এতে মানুষ মৃত্যুর কথা সর্বক্ষণ মনে রাখতে পারে, জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব বোঝে।”
ফারুক সাহেব তাঁর খামারবাড়ির এক পাশে বিশেষভাবে এই মাটির ঘর নির্মাণ করেন। ইট-পাথরের পরিবর্তে সাধারণ মাটির দেওয়াল, উপরে টিনের ছাউনি, দুই দিকেই দরজা ও জানালা—দেখতে সাধারণ হলেও ভেতরে রাখা কবর এটিকে দিয়েছে অন্যরকম তাৎপর্য।
কবরের ওপর রাখা হয়েছে একটি কাঠের খাটিয়া, যেখানে তিনি মাঝে মাঝে বিশ্রামও নিতেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন। তাঁদের মতে, মৃত্যুর কথা স্মরণ করে নিজের ভেতরে বিনয় ও ভয় জাগ্রত রাখতেই এমন অভ্যাস গড়ে তুলেছিলেন ব্যবসায়ী।
এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হালিম বলেন, “আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম উনি হয়তো মাজার বা ধর্মীয় কোনো স্থাপনা তৈরি করছেন। পরে বুঝলাম, জীবিত থাকতেই নিজের কবর বানিয়েছেন। বিষয়টি আমাদের কাছে অদ্ভুত মনে হলেও গভীর চিন্তার খোরাক জোগায়।”
আরেকজন তরুণ বাসিন্দা নাজমুল হক বলেন, “মৃত্যু নিয়ে মানুষ সাধারণত ভীত থাকে। কিন্তু তিনি মৃত্যুকে খুব সহজভাবে গ্রহণ করেছেন। এ দৃশ্য দেখে আমরাও বুঝতে পারি জীবন ক্ষণস্থায়ী।”
ইসলামী শিক্ষার আলোকে মৃত্যুর আগে মৃত্যুর প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়টি অপরিচিত নয়। অনেক আলেম বলেন, মৃত্যু নিয়ে চিন্তাভাবনা মানুষের জীবনকে সৎপথে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। তবে জীবিত অবস্থায় কবর খুঁড়ে রাখা একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত।
ঠাকুরগাঁওয়ের স্থানীয় এক মাদ্রাসা শিক্ষক মতিউর রহমান বলেন, “মৃত্যু স্মরণ করা মু’মিনের বৈশিষ্ট্য। যদিও এভাবে কবর খুঁড়ে রাখা প্রচলিত নয়, তবে এর মাধ্যমে তিনি যে মৃত্যুর কথা সর্বদা স্মরণে রেখেছেন, তা প্রশংসনীয়।”
এখন এলাকার অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে এসে কৌতূহল নিয়ে দেখছেন এই মাটির ঘর। কেউ কেউ ছবি তুলছেন, কেউ আবার নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে ভাবছেন নিজের মৃত্যুর কথা।
কচুবাড়ি-কৃষ্টপুর গ্রামের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ তাই এখন কেবল একটি ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, বরং মৃত্যুচিন্তা ও জীবনদর্শন নিয়ে মানুষের মাঝে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সম্পাদক : শাওন আমিন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোঃ গিয়াস উদ্দীন, নির্বাহী সম্পাদক : ঝড় আমিন প্রকাশক : মোঃ সোহরাব আলী
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: হালিশহর, চট্রগ্রাম। ঢাকা অফিস : বাসা নং ৫১/৩ ধানমন্ডি ৩/এ ঢাকা-১২০৯
মোবাইল : 𝟎𝟏𝟕𝟏𝟐𝟒𝟏𝟓𝟖𝟓𝟑 𝟎𝟏𝟓𝟖𝟎𝟖𝟐𝟎𝟔𝟔𝟑 𝟎𝟏𝟕𝟏𝟐𝟎𝟔𝟏𝟏𝟔𝟑 𝐄-𝐦𝐚𝐢𝐥 : 𝐬𝐡𝐚𝐰𝐨𝐧𝐚𝐦𝐞𝐞𝐧𝟓@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦