জেলা প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভূল্লী থানাধীন বালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ টেন্ডার ছাড়াই কর্তনের অভিযোগ উঠেছে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তহসিলদার আবুল কালাম আজাদকে কারণ দশার্নো (শোকজ) করা হয়।
তবে ভূমি অফিসের সরকারি গাছগুলো এসিল্যান্ড মো. আশাদুল হকের নির্দেশেই কাটা হয়েছে বলে জানান তহসিলদার।
শনিবার (০৪ অক্টোবর) ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশাদুল হকের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে শোকজ করা হয়।
কারণ দশার্নো চিঠিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (০২ অক্টোবর) বালিয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) ভূমি অফিস প্রাঙ্গনে অবস্থিত ৮টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে কর্তন করে অপরাধ করেছেন। কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে গাছ কর্তন করার অপরাধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার কারণ আগামী ৩ কার্য দিবসের মধ্যে দর্শানোর জন্য মো. আবুল কালাম আজাদকে বলা হয়।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা বালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পাশেই আরেকটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে বলে মাঠে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির ১০টি গাছ কর্তনের অনুমতি ও মূল্য নির্ধারণের জন্য লিখিত আবেদন করেন তহসিলদার আবুল কালাম আজাদ। তবে যখন আবেদন করা হয় তখন এসিল্যান্ডের দায়িত্বে ছিলেন সদর ইউএনও মো. খাইরুল ইসলাম। তখন তিনি গাছগুলো কর্তনের অনুমতি দেননি।
পরবর্তীতে গত মাসের ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন এসিল্যান্ডের দায়িত্বে আসেন মো. আশাদুল হক। পরে এক বৈঠকে তহসিলদার আবারো গাছ কর্তনের বিষয়টি উপস্থাপন করলেএসিল্যান্ড গাছগুলো কর্তনের নির্দেশ দেন তহসিলদারকে। পরে গত বৃহস্পতিবার তহসিলদার গাছগুলো কর্তন করলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ভাইরাল হয়। এনিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। স্থানীয়রা সরাসরি এসিল্যান্ডকে দায়ী করলে তিনি তরিঘরি করে দায় এড়িয়ে তহসিলদার আবুল কালাম আজাদকে শোকজ করেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (তহসিলদার) আবুল কালাম আজাদ জানায়, স্যারের (এসিল্যান্ড) নির্দেশেই গাছগুলো কাটা হয়েছে। অথচ আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে শোকজ করা হলো। স্যার এখন অস্বীকার করছেন। নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে তাই গাছগুলো কাটা প্রয়োজন ছিল। সেজন্য আমি স্যারের বরাবরে লিখিরভাবে আবেদনও করেছি। গাছের বিষয়টি ইউএনও স্যার, উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারও জানেন। ইউএনও স্যারও বলেছিলেন যখন নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে তখন গাছগুলো কেটে এক পাশে রেখে দিয়েন।
তিনি আরও বলেন, স্যার (এসিল্যান্ড) নিজেই এসেছিলেন অফিসে। নিজেই কথা বলে গেছেন উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে। এদিকে গাছের জন্য কাজ আটকে আছে। ঠিকাদার চাপ দিচ্ছে গাছ কাটার জন্য। কিন্তু এসিল্যান্ড ও ইউএনও স্যার দুইজনেই জানে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ ছাড়া তহসিলদার কখনোও গাছ কাটতে পারে না। তদন্ত করলেই দেখা যাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ ছাড়া তহসিলদারের একার পক্ষে সরকারি গাছ কর্তনের সাহস পাবে না। দোষ করে কর্মকর্তারা আর ধরা খায় কর্মচারীরা। পরে কর্মকর্তারা নিজেরা বাচতে অন্যের উপর দায় চাপিয়ে দেয়। অথচ তারা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত থাকেন। কিন্তু কাঁধে দায় নিতে চাই না।
তারা আরও বলেন, যে গাছগুলো কর্তন করা হয়েছে তার বাজার মূল্য হবে এক লক্ষাধিক টাকা। সরকারি সম্পদ এভাবে টেন্ডার ছাড়াই ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করা হলে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় স্থানীয়রা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
তবে এবিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশাদুল হকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে ফোন বন্ধ করে রাখেন।
এ বিষয়ে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খাইরুল বলেন, নির্দেশ দিলেই কি তিনি গাছ কাটবেন? আমাকে অবগত করা বা এসিল্যান্ডকে অবগত করা এটা এতো আইনের ভাষা হতে পারে না। আমি তো আইনের বাইরে কণ কাজ করি না।
তিনি আরও বলেন, বালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে একটা নতুন ভবন নির্মাণ হবে সে হিসেবে গাছ আগে কাটা হলে পরে টেন্ডার হবে।
তবে এব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বুলবুল আহমেদ এর সঙ্গে যোগাযোগ করা তিনি জানান, গাছ কর্তন ও তহসিলদারকে শোকজ করার বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করা হবে।
সম্পাদক : শাওন আমিন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোঃ গিয়াস উদ্দীন, নির্বাহী সম্পাদক : ঝড় আমিন প্রকাশক : মোঃ সোহরাব আলী
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: হালিশহর, চট্রগ্রাম। ঢাকা অফিস : বাসা নং ৫১/৩ ধানমন্ডি ৩/এ ঢাকা-১২০৯
মোবাইল : 𝟎𝟏𝟕𝟏𝟐𝟒𝟏𝟓𝟖𝟓𝟑 𝟎𝟏𝟓𝟖𝟎𝟖𝟐𝟎𝟔𝟔𝟑 𝟎𝟏𝟕𝟏𝟐𝟎𝟔𝟏𝟏𝟔𝟑 𝐄-𝐦𝐚𝐢𝐥 : 𝐬𝐡𝐚𝐰𝐨𝐧𝐚𝐦𝐞𝐞𝐧𝟓@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦