আব্দুল আউয়াল ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের গ্রামীণ ঐতিহ্যময় ধামের গান আজকাল আর্থিক সংকটের কারণে এর ব্যাপকতা দিনদিন কমছে। একসময় প্রতি পাড়ায় পাড়ায় চলত এ ধামের গান। গ্রাম্য শিক্ষিত-অশিক্ষিত যুবকদের পরিবেশিত এ ধামের গানের আসরে পরিবারের সকল বয়সের নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ সকলে এক কাতারে বসে রাতভর তা উপভোগ করত। করুন উপজীব্য বিষয়ে সকলে চোখের জল ফেলে আবেগে আপ্লুত হতো।
প্রতি বছর কার্তিক মাসে লক্ষ্মীপূজার সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ঠাকুরগাঁও জেলার সর্বত্র লক্ষ্মীধামের গানের আসর আয়োজন করে থাকে। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরেও শুরু হয়েছে ধামের গানের আসর। হিন্দু মুসলমানসহ সকল ধর্মের নারী-পুরুষ শিশু বৃদ্ধ একই কাতারে বসে নাওয়া-খাওয়া ভুলে এসব গান উপভোগ করে থাকে। জেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ২ শতাধিক ধামের আসর শুরু হয়েছে।
দারিদ্রতার কষাঘাতে আজকাল জনপ্রিয় এই ধামের গান হারিয়ে যেতে বসেছে। সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা ছাড়াই স্থানীয় যুবকরা গ্রামে গ্রামে চাঁদা তুলে এ গানের আয়োজন করে থাকে। আদায়কৃত অর্থ পালাকারদের সম্মানী হিসেবে ব্যয় করা হয়। পালার মান-যাচাই করে প্রতিটি পালাকে দেড় হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত সম্মানী দেয়া হয় বলে জানান ঢোলারহাট ফাটাশিব ধামের গানের আয়োজক কমিটির সভাপতি প্রিরন চন্দ্র বর্মন।
দ্বিতীয় পর্যায়ে জনপ্রিয় পালা পরিবেশনকারী দলদের নিয়ে আয়োজন হয় চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগীদের চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দলগুলোকে টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, বাইসাইকেল, হারমোনিয়াম পুরস্কার দেয়া হয়। আবার কোথাও কোথাও নগদ টাকা দেয়া হয়।
আঞ্চলিক ভাষায় কাল্পনিক চরিত্রগুলো রচনা করা হয়। গ্রামে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে পালা তৈরি করা হয়। আবার কখনও যাত্রা পালার বই থেকে পালা গেয়ে মানুষকে আনন্দ দেয়া হয় বলে জানান, পালাকার বোদা এলাকার মলিন চন্দ্র বর্মন। ধামের গানে লোকনাট্য আঙ্গিকের পুরুষকেন্দ্রিক গান ও অভিনয় পরিবেশিত হলেও গ্রাম বাংলায় এর সমাদরের কমতি নেই। ধামের গান শুরু হওয়ার কথা শুনলেই এ অঞ্চলের মানুষের মনেপ্রাণে-চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ধামের গানের মজার ব্যাপার হলো- নাটকের বিভিন্ন নারী চরিত্রে পুরুষরাই মহিলাদের কাপড় পরে লম্বা চুলের ঝুঁটি, মাথায় খোঁপা, নাকে নাকফুল, কানে দুল পরে অভিনয় পরিবেশন করে। তাদের চেনা দায় হয়ে পড়ে। ধামের গানে পুরুষ চরিত্রটি যেন এক অপূর্ব সৃষ্টি। দর্শকদের আনন্দ দেয়ার জন্য ছেলেরা মেয়ের পোশাক পড়ে অভিনয় করার কথা স্বীকার করেন খলিসাকুড়ি এলাকার ধামের ঘান শিল্পী নিরঞ্জন। পুরুষ চরিত্রটি হাস্যরস্য, কৌতুক রসে ভরা থাকে। কখনও বখাটে ছেলে, কখনও উপহাসের পাত্র। এসব গান শুরু হলে গ্রামের নারী পুরুষ বৃদ্ধ সকলে মাটিতে বসে মনোযোগ দিয়ে গান উপভোগ করে। এর কদর সারা জেলায়।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান সারোয়ার জানান, ঠাকুরগাঁও জেলার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় লক্ষ্মীপূজার সময় গ্রামে গ্রামে ধামের গান হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এটি অত্র এলাকার লোকজ সংস্কৃতির একটি অংশ। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে এ সংস্কৃতি আজ লুপ্তির মুখে। তাই সেটি রক্ষায় সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান তিনি।
সম্পাদক : শাওন আমিন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোঃ গিয়াস উদ্দীন, নির্বাহী সম্পাদক : ঝড় আমিন প্রকাশক : মোঃ সোহরাব আলী
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: হালিশহর, চট্রগ্রাম। ঢাকা অফিস : বাসা নং ৫১/৩ ধানমন্ডি ৩/এ ঢাকা-১২০৯
মোবাইল : 𝟎𝟏𝟕𝟏𝟐𝟒𝟏𝟓𝟖𝟓𝟑 𝟎𝟏𝟓𝟖𝟎𝟖𝟐𝟎𝟔𝟔𝟑 𝟎𝟏𝟕𝟏𝟐𝟎𝟔𝟏𝟏𝟔𝟑 𝐄-𝐦𝐚𝐢𝐥 : 𝐬𝐡𝐚𝐰𝐨𝐧𝐚𝐦𝐞𝐞𝐧𝟓@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦