মাহমুদ আহসান হাবিব:ঠাকুরগাঁওয়ে সুধীর চন্দ্র বর্মন নামে এক ব্যক্তিকে রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে বৈদ্যুতিক শক, মারধর, সাদা স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর ও টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবলীগ ও যুবদলের তিন নেতার বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটে শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের নিমবাড়ি এলাকায়। পরে সোমবার ভুক্তভোগী সুধীর চন্দ্র (৬১) সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি একই ইউনিয়নের নিমবাড়ি এলাকার অশোক লাল বর্মনের ছেলে।
অভিযুক্তরা হলেন, আকচা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও স্বপ্ন জগত পার্কের মালিক গোলাম সরওয়ার চৌধুরীর বড় ছেলে যুবলীগ নেতা সাইদ চৌধুরী (৩৫), পুরাতন ঠাকুরগাঁও আশিরপাড়া গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে যুবদল নেতা জিলানী (২৯) এবং আকচা মুন্সিপাড়া গ্রামের মৃত আশরাফুল আলমের ছেলে যুবদল নেতা সাইদ (৩০)।
ভুক্তভোগী সুধীর চন্দ্র জানান, গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মিনবাড়ি বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাকে জোরপূর্বক তুলে নেয় জিলানী, সাইদ ও সাইদ চৌধুরী। পরে তাকে স্বপ্ন জগত চৌধুরী পার্কের ভেতরে নিয়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। তার কাছে থাকা ৩০০ টাকার সাদা স্ট্যাম্প এবং ৫৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। এরপর আরও দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। তিনি অস্বীকৃতি জানালে ফের মারধর করে এবং সাদা স্ট্যাম্পে জোর করে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়।
অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, অভিযুক্তরা তাকে ও তার পরিবারকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দেয়। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই সারওয়ার চৌধুরীর ছেলে যুবলীগ নেতা সাইদ চৌধুরী বাবার প্রভাবকে ঢাল বানিয়ে পুরো গ্রামকে একধরনের আতঙ্কে রাখছেন। বালুর ঘাট থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসা সবকিছুই তার নিয়ন্ত্রণে চলছে। গ্রামের কেউ তাদের বাপ-ছেলের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললে বিপদ ডেকে আনে। যুবদল নেতা জিলানী ও সাইদের মাধ্যমে সেই ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের পার্কের ভেতরে থাকা একটি গোপন ঘরে। সেখানে মারধর, ভয়ভীতি, এমনকি মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়। মাদকসহ ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগও রয়েছে। সারওয়ার চৌধুরীর আকচা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির সভাপতি হওয়ায় অনেকে মুখ খুলতে সাহস পান না।
তারা আরও বলেন, বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোকে সবসময় ভয় ও চাপে রাখা হয়। সাইদের কথাই যেন আকচা ইউনিয়নের নিয়ম। তাদের পার্কের ভেতর একটি গোপন কক্ষ আছে, যেখানে কাউকে তুলে নিয়ে গিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। পাশাপাশি সেখানে নারীদের এনে অনৈতিক কর্মকাণ্ডও চালানো হয়। তাদের পার্কে থাকা ঘর গুলো ভাড়া দেয়া হয় স্কুল-কলেজ সহ বাহির থেকে আসা নর-নারীদের। এমনি সরকার পতনের পর সারওয়ার চৌধুরী স্থানীয় আওয়ালীগের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে মোটা আংকের টাকাও নেন। না হলে হয়রানী মুলক মামলায় তুলে আনার হুমকি দেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতা বলেন, তাদের বাবার-ছেলের সব অপকর্ম জেলা নেতাদের কাছে জানানো হলেও শেষ পর্যন্ত টাকার কাছে ম্যানেজ হয়ে যায়। স্বপ্ন জগত পার্কের আড়ালে মাদক, নির্যাতন সেল ও নারীর শোষণের কার্যক্রম চলে। এছাড়া বালু ঘাট, জমি ও মাদক ব্যবসার দখলেও সাইদ চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, এভাবে অব্যাহত থাকলে ভোট তো দুরের কথা কেউ দলেই থাকতে চাইবে না।
কয়েকজন হিন্দু বলেন, সারওয়ার চৌধুরীর ছেলে যুবলীগ নেতা সাইদ চৌধুরী গ্রামের হিন্দু পরিবারগুলোকে ভয়ভীতির মধ্যে রাখে। সাইদ চৌধুরীর দমন-নিপীড়ন ও হুমকির কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না। এ কারণে এলাকার সাধারণ মানুষ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের জীবনে নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে। দিনে ভোট চান, আর রাতে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখান। পার্কের ভিতরে গোপন ঘরে মানুষকে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়, মাদক হাতে ধরিয়ে ভিডিও করা হয়। এভাবে গ্রামে ত্রাস সৃষ্টি করা হচ্ছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে যুবলীগ নেতা সাইদ চৌধুরী, যুবদল নেতা জিলানী ও সাইদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ কথা বলতে রাজী হননি। এমনকি তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ করে রাখেন।
এবিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারোয়ার আলম খান বলেন, আমরা অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। প্রয়োজনীয় তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযোগের প্রমাণ ও সঠিক তথ্য মিলিয়ে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সম্পাদক : শাওন আমিন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোঃ গিয়াস উদ্দীন, নির্বাহী সম্পাদক : ঝড় আমিন প্রকাশক : মোঃ সোহরাব আলী
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: হালিশহর, চট্রগ্রাম। ঢাকা অফিস : বাসা নং ৫১/৩ ধানমন্ডি ৩/এ ঢাকা-১২০৯
মোবাইল : 𝟎𝟏𝟕𝟏𝟐𝟒𝟏𝟓𝟖𝟓𝟑 𝟎𝟏𝟓𝟖𝟎𝟖𝟐𝟎𝟔𝟔𝟑 𝟎𝟏𝟕𝟏𝟐𝟎𝟔𝟏𝟏𝟔𝟑 𝐄-𝐦𝐚𝐢𝐥 : 𝐬𝐡𝐚𝐰𝐨𝐧𝐚𝐦𝐞𝐞𝐧𝟓@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦