ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ে সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজী, মামলা বাণিজ্য, বিপদে ফেলে টাকা আদায় করাসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে মিজানুর রহমান মিজানের বিরুদ্ধে। ৫ আগষ্টের পরে হয়ে যান আগুল ফুলে কলাগাছ। ভিটে ছাড়া করেছেন এক আদিবাসী পরিবারকে। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এলাকাবাসী। আর পুলিশের কিছু বখে যাওয়া সদস্যের মদদপুষ্টে হয়ে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন তিনি।
নাম তার মিজানুর রহমান। ডাকে তাকে মিজান করে। মিজান অন্যের দোকানের কর্মচারী। মিজানের বাবা নরু মিয়া ছিলেন একজন মাছ বিক্রেতা। এখন অটোরিক্সা চালক। তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। মিজানের আদি বাড়ী ছিল কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলায়। প্রায় ২০ বছর আগে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিনের আরাজী ঢাঙ্গীপুকুর গ্রামে বসবাস করতে শুরু করে তার পরিবার। দাখিল পর্যন্ত পড়েছেন কি না সন্দেহ আছে। কিন্তু ৫ আগষ্টের পর থেকে মিজানের ভাগ্য খুলতে শুরু করে। হয়ে যান সমন্বয়ক। পুলিশের সহযোগিতায় শুরু হয় চাঁদাবাজী, মামলা বাণিজ্য, মানুষকে বিপদে ফেলে টাকা আদায় করাসহ নানা অপকর্ম।
মিজানকে নিয়ে অপকর্ম করতে গিয়ে স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়ে ক্ষমা চান পুলিশ। এমন কথা জানালেন মিলনপুর হাটপুকুরী গ্রামের আলাল উদ্দীন। তিনি জানান এলাকায় নারী সংক্রান্ত ঘটনা সাথে জড়িত থাকার অপরাধে তিনটি ছেলে এবং একটি মেয়েকে একটি বাড়িতে এলাকাবাসী আটকিয়ে রেখে পুলিশে খবর দেয়। কিন্তু পুলিশ আসতেছে আসতেছে বলে গভীর রাতে আসে। খবর দেই ৮টায়, পুলিশ আসে ১টায়। পরে সমন্বয়ক মিজানকে নিয়ে আসে। ওতো পুলিশের কেউ না, ওকে নিয়ে পুলিশ আসলো কেন ? ওকে দিয়ে পুলিশ ব্যবসা করছে। মিজানকে দেখে এলাকার মানুষ উত্তেজিত হয়ে উঠে। পরে মিজানও ক্ষমা চায়, পুলিশও ক্ষমা চায়। একই কথা বলেন ফারুক হোসেন, রফিকুল ইসলাম, স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রউফসহ অনেকে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিজানকে এক যুবদল নেতা ফোন দেন। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করেন তোমাকে কি কেউ এখান থেকে ফোন দিয়েছে ? না ওখান থেকে কেউ ফোন দেয়নি। তাহলে তুমি জান এটা খারাপ কাজ, এটার জন্য সুপারিশ করো কেন ? শুনেন আমি কি বলি মেয়েকে নিয়ে যে থানায় দিবে, থানার বিকল্প হিসাবে কি মালপাতি দেওয়ার লোক আছে । মেয়ের সাথে পার্সোনালি কথা বলো। সমস্যা নাই, পুলিশ আইতাছে আমারে বাইতে থেকে উঠায় লইয়া যাবে। ২৪৬ বা ২৪৪ এ মামলা হবে, এটাতে মামলা হবে, জরিমানা হবে ৫২৫ টাকা। ওরে কিছুক্ষন ঠুকন দিয়া, বাড়িওয়ালারেসহ পুলিশের গাড়িতে উঠায় দিবি। নাহলে মাদক-টাদক দিয়ে পুলিশে উঠায় দেন।
মিজানের ভয়ে মুখ খুলছে না কেউ। বার বার চাঁদা আদায়, হুমকি-ধামকি দিয়ে ভিটে ছাড়া করেছেন একটি আদিবাসী পরিবারকে। ওই আদিবাসী কুলো জানায় আমার কাছ থেকে নাজিম, মিজানসহ আরেক ছেলে একবার এক হাজার টাকা নিয়ে যায়। আরেক বার ৪ হাজার টাকা নিয়ে যায়। তারা ছোট ছোট ছেলে মেয়ে আমাকে লাটি দিয়ে মারতে আসে। আমাকে হুমকি দেয়। আমি কিভাবে এখানে থাকবো ? আর এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে লাঞ্চিত হন রমেশ চন্দ্র সরকার। তিনি জানান আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। সেখানে কিছু লোক গেনজাম করতেছে। আমি গিয়ে দিখি মুরবীর উপর চেউলি (লাঠি) উঠাচ্ছে মারার জন্য এবং তারা টাকাও নিয়েছে। আমি বলতে গেলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান দোকানে বাকী না দেওয়ায় তারা আমার ছেলের নামে বিভিন্ন রকম মন্তব্য করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক ইউপি সদস্য বলেন এরা যে সব কাজকর্ম করছে এতে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। এই মিজানসহ কয়েকটি ছেলে এক বিয়ে বাড়িতে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা নেয়। আরেক যুবদল নেতা বলেন এরা ফুটানির বাজারের পাশে এক হিন্দু লোকের কাছে ৭ হাজার টাকা জোর করে চাঁদা আদায় করে। এদের নামে অভিযোগের শেষ নাই।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজয়ানুল ইসলাম শাহ বলেন মিজান, রহিদুলসহ কয়েকটি ছেলে এলাকায় মানুষকে বিপদে ফেলে নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছে। সে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, তারেক রহমান ও মির্জা আব্বাসকে নিয়ে ফেসবুকে মাতালসহ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে। সে আমাদের দলের কেউ না। ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন সেসহ কয়েকটি ছেলে কখনো জামায়াত, কখনো বিএনপি, এখনো এনসিপি নাম পরিচয় বিভিন্ন অপকর্ম করছে। যখন যেটা সুযোগ পায় তখন সেটা করছে। এনসিপি’র জেলা কমিটির আহবায়ক এ্যাড. সারওয়ার হাসান বলেন মিজান নামের ছেলেটি এনসিপির কেউ নয়। তার বিরুদ্ধে কিছু পেলে আমি নিজেই মামলা দায়ের করবো।
যার বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ মিজানুর রহমান মিজান বলেন একজন আরেক জনের নামে অভিযোগ করতেই পারে। তবে সেটার সত্যতা কতটু সেটাই দেখার বিষয়। তাদের কাছ থেকে শুনে আর সকলের অভিযোগ গুলো নিয়ে একটা মামলা করে দেন।
সম্পাদক : শাওন আমিন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোঃ গিয়াস উদ্দীন, নির্বাহী সম্পাদক : ঝড় আমিন প্রকাশক : মোঃ সোহরাব আলী
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: হালিশহর, চট্রগ্রাম। ঢাকা অফিস : বাসা নং ৫১/৩ ধানমন্ডি ৩/এ ঢাকা-১২০৯
মোবাইল : 𝟎𝟏𝟕𝟏𝟐𝟒𝟏𝟓𝟖𝟓𝟑 𝟎𝟏𝟓𝟖𝟎𝟖𝟐𝟎𝟔𝟔𝟑 𝟎𝟏𝟕𝟏𝟐𝟎𝟔𝟏𝟏𝟔𝟑 𝐄-𝐦𝐚𝐢𝐥 : 𝐬𝐡𝐚𝐰𝐨𝐧𝐚𝐦𝐞𝐞𝐧𝟓@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦