বিশেষ প্রতিনিধি।।যে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আস্থা রেখেছিল দেশের আপামর জনতা, তাদের স্বচ্ছতার দাবি আজ প্রশ্নের মুখে। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা কয়েকজন উপদেষ্টা, প্রেস সচিব এবং সমন্বয়কের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত হাজার হাজার কোটি টাকা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে পাচারের এক নজিরবিহীন অভিযোগ উঠেছে। ‘দ্য এশিয়া পোস্ট নিউজ’ নামে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের ফাঁস করা এক প্রতিবেদনে এই ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনটিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরের দুর্নীতির এক অন্ধকার জগতের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা অত্যন্ত সুরক্ষিত এবং সহজে শনাক্ত করা যায় না এমন ডিজিটাল মুদ্রা, বিটকয়েনের মাধ্যমে তাদের অবৈধ সম্পদ জমা করেছেন। ফাঁস হওয়া তথ্য অনুযায়ী, অভিযুক্তদের বিটকয়েন ওয়ালেটে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে তার একটি খতিয়ান নিচে দেওয়া হলো:
শফিকুল আলম (প্রেস সচিব): ৯৩.০৬ বিটিসি, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১২৫০ কোটি টাকা (১০ মিলিয়ন ডলার)।
নাহিদ ইসলাম (সাবেক উপদেষ্টা): ২০৪.৬৫ বিটিসি, যার আনুমানিক মূল্য ২৫০০ কোটি টাকা (১৯ মিলিয়ন ডলার)।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া (উপদেষ্টা): ১১৩ বিটিসি, যার মূল্য প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা (১২ মিলিয়ন ডলার)।
সারজিস আলম (সমন্বয়ক): প্রায় ১০০০ কোটি টাকা (৭.৭৬ মিলিয়ন ডলার)।
খান তালাত মাহমুদ রাফি (সমন্বয়ক): মাত্র ১১.০৯ বিটিসি, কিন্তু পেছনে রয়েছে এক অবিশ্বাস্য লেনদেন, যার আর্থিক মূল্য দেখানো হয়েছে ১২,০০০ কোটি টাকা! ধারণা করা হচ্ছে, এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচারের একটি জটিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
জাতির সাথে কি বিশ্বাসঘাতকতা
এই অভিযোগটি এমন এক সময়ে সামনে এলো যখন অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতিমুক্ত এবং স্বচ্ছ একটি ব্যবস্থা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দেশের মানুষ যখন একটি নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখছিল, তখন সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের নামেই এমন ভয়ংকর দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় জনমনে তীব্র হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছে, পরিবর্তন এবং স্বচ্ছতার নামে যা হচ্ছে, তা কি জাতির সাথে একটি বড় প্রতারণা নয়?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্যই হলো অবৈধ লেনদেন গোপন রাখা। প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে এই ডিজিটাল মুদ্রার মাধ্যমে অর্থ পাচার করা অনেক সহজ এবং এর উৎস খুঁজে বের করা প্রায় অসম্ভব। অভিযুক্তরা যে এই পথ বেছে নিয়েছেন, তা তাদের পরিকল্পিত দুর্নীতির গভীরতার দিকেই ইঙ্গিত করে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর এখনো পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আসেনি। অভিযুক্ত ব্যক্তিরাও সম্পূর্ণ নীরবতা পালন করছেন। এই নীরবতা জনমনে সন্দেহ আরও ঘনীভূত করছে। নাগরিক সমাজ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অবিলম্বে এই অভিযোগের একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন। তাদের মতে, যদি এই অভিযোগের বিন্দুমাত্র সত্যতা থাকে, তবে এটি হবে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি।
জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা—অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং দুর্নীতির মূলোৎপাটনে তারা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা রক্ষা করা হোক। অন্যথায়, এই সরকারের ওপর মানুষের শেষ বিশ্বাসটুকুও ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।
সম্পাদক : শাওন আমিন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোঃ গিয়াস উদ্দীন, নির্বাহী সম্পাদক : ঝড় আমিন প্রকাশক : মোঃ সোহরাব আলী
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: হালিশহর, চট্রগ্রাম। ঢাকা অফিস : বাসা নং ৫১/৩ ধানমন্ডি ৩/এ ঢাকা-১২০৯
মোবাইল : 𝟎𝟏𝟕𝟏𝟐𝟒𝟏𝟓𝟖𝟓𝟑 𝟎𝟏𝟓𝟖𝟎𝟖𝟐𝟎𝟔𝟔𝟑 𝟎𝟏𝟕𝟏𝟐𝟎𝟔𝟏𝟏𝟔𝟑 𝐄-𝐦𝐚𝐢𝐥 : 𝐬𝐡𝐚𝐰𝐨𝐧𝐚𝐦𝐞𝐞𝐧𝟓@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦