শ্যামলী আকতার , ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: দখলদাররা কতটা সংঘবদ্ধ আর প্রভাবশালী হলে একটি সরকারি শতবর্ষী ৬একর ৫৫ শতক জমির বাজার নিজেদের মালিকানাধীন সম্পত্তি দাবি করতে পারে তার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের একটি মহল। সরকারি নিয়ম নীতি, আইন কানুন, আদেশ নিষেধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের দখল টিকিয়ে রাখতে যে সমস্ত কুট কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে মহলটি তাতে হতবাক হয়ে পড়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ এবং খোদ পৌর প্রশাসন।এই দখল প্রকৃয়ার মাধ্যমে স্বাধীনতার পর ৫৩ বছরে প্রায় ১২ কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন তারা। তবে এলাকাবাসী মনে করেন সরকারি এ বাজারটি বেদখল হওয়ার পেছনের মূল শক্তি হলো পৌর কর্তৃপক্ষ নিজেরাই। সদর উপজেলার ঠাকুরগাঁও রোড এলাকায় ঠাকুরগাঁও পৌরসভার আওতায় পরিচালিত ঐতিহ্যবাহী রোড বাজার। দিনের পর দিন স্থানীয় প্রভাশালীরা দখলে নিয়ে নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করছেন এই বাজারটি। নিয়মনীতির তোয়াাক্কা না করে তারা বাজারটিতে গড়ে তুলেছে একের পর এক বহুতল আবাসিক ভবন, গাড়ির গ্যারেজ,পাকা দোকানপাট, হোটেল রেস্তোরা ও গোডাউন। ১৭ বছর আগেও বাজারটি ৫ লাখ টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছিল। দখলের কারণে বাজারটির স্থান সংকুচিত হয়ে আসতে থাকায় এখন মাত্র ৭০ হাজার টাকায় ইজারা দেয়া হয় কিন্তু ইজারা নেয়া কোন লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। চলতি বছর ইজারা নেয়ার মতো কোন ব্যবসায়ী খুঁজে পাওয়া যায়নি। পৌর কর্তৃপক্ষকে এসব ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করলে তারা দায়সারা গোছের একটি নোটিশ প্রদান করেন দখলদারদের। সেসব নোটিশের কোন তোয়াক্কা না করে দখলদাররা নিজেদের ইচ্ছে মত ভবন নির্মাান করেই চলছেন। সর্বশেষ পৌর মেজিষ্ট্র্যাট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুজ্জামান ২১ আগস্ট’২৫ তারিখ অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে সেখানে বহুতল বাজার ভবন তৈরি করা হবে মর্মে নোটিশ প্রদান করেন। নির্দিষ্ট দিনে মেজিস্ট্র্যাট ঘটনা স্থলে এসে দেখেন সেখানে বাজারের জমিগুলো দখলদারেরা দলিল করে নিজেদের বলে দাবি করছে এবং ইতোমধ্যে তারা উচ্ছেদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। বাধ্য হয়ে পৌর মেজিস্ট্র্যাট ফিরে যান। এ ব্যাপারে পৌর মেজিষ্ট্র্যাট রাকিবুজ্জামান এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন“ আমরা অবশ্যই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে, আমাদের পরিকল্পনা মোতাবেক বহুতল বাজার ভবন তৈরি করবো।ঠাকুরগাঁও রোড বাজারে দখলদারদের একটি অবৈধ “হাট কমিটি” আছে। এই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন যথাক্রমে গোলাম হোসেন ও জুনায়েদ বোগদাদি। এই কমিটির কাজই হলো সম্পুর্ন হাটটিকে নিজেদের দখলে রাখার জন্য সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। এরা নিজেরা হাটের জমি দখল করে বাড়ি ঘর দোকান পাট নির্মানের পাশাপাশি প্রায় ৩৫০ জন্য ক্ষুদ্র ভাসমান ব্যবসায়ীকে মাসিক ৫শ টাকা হারে ভাড়া দিয়ে গত ৫৩ বছরে প্রায় ১২ কোটি টাকা নিজেদের পকেটে ঢুকিয়েছেন। যখনই পৌরসভা থেকে উচ্ছেদের নোটিশ আসে তখনই এ সকল ক্ষদ্র ব্যবসায়ীদের নিকট হতে উচ্ছেদ ঠেকানোর কথা বলে এই টাকা খরচ দেখানো হয়।উল্লেখ্য,২০২৩ সালে ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সেবা পেতে হয়রানি, ঘুষ-দুর্নীতির শিকার সেবাপ্রত্যাশী জনসাধারণ এবং সেবাপ্রদানকারী বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের অংশগ্রহণে গত ০৩ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানি করা হয়।জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমানের পরিচালনায় গণশুনানিতে সদর উপজেলার ৩৪টি সরকারি দপ্তরের অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষসহ মোট ৬০টি অভিযোগ করা হয়। সেখানে রোড বাজার অবৈধ দখলে থাকার বিষয়টি ঠাকুরগাঁও রোড প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে অভিযোগ উথ্থাপন করা হয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বেদখল হওয়া হাটের জমি উদ্ধারের জন্য জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেন। উক্ত গণশুনানী শেষ হওয়ার পর ২ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই হাটের জমি উদ্ধারের। উল্টো সম্প্রতি অবৈধ দখলদাররা একাধিক বহুতল ভবন নির্মানের কাজ শুরু করে দিয়েছে।এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও রোড বাজারের ছাগল ক্রয় বিক্রয়ের হাট ইজারাদার আব্দুল করিমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন“আমি ছাগল হাট ইজারা নিয়েছি কিন্তু হাটের তো কোন জায়গা নেই। উক্ত ছাগল হাটের প্রায় ১ একর জমি দখল করে তোবারক মিয়া নামে একজন মার্কেট করে ফেলেছেন”। এদিকে হাটটি পরিদর্শন করে দেখা যায় ডিম বাবু নামে একজন ব্যবসায়ী বাজারের জায়গা দখল করে তার ট্রাকের গ্যারেজ তৈরি করেছেন। বাজারের কিছু কিছু জমি প্রভাশালীরা আটকে রেখেছেন, ভবিষ্যতে সেখানে স্থাপনা তৈরি করার জন্য। সরকারি হাটের অস্তিত্ব না থাকলেও তিনজন ব্যাক্তি পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে হাটের আংশিক টোল আদায়ের ইজারা নিয়েছেন। এরা হলেন ছাগল হাট ইজারাদার,বুচারি মার্কেট ইজারাদার, বাঁশ হাটি ইজারাদার। তবে অবাক করা ব্যাপার হলো এরা কেউ হাটের নির্দিষ্ট জায়গায় বসতে পারেননি। তারা প্রত্যেকেই বাজারের বাইরে বিভিন্ন স্থানে বসেছেন।এলাকার সচেতন মহল মনে করেন পৌর কর্তৃপক্ষ কিছুদিন পর পর উচ্ছেদের নোটিশ প্রদান আবার অর্থের বিনিময়ে তা চেপে যাওয়ার ফলেই আজ দখলদারেরা এতটা সাহস সঞ্চয় করে পুরো বাজারটিকেই গ্রাস করে নেয়ার সাহস দেখিয়েছে। অবিলম্বে বেদখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধার ও নতুন করে বহুতল ভবন নির্মান কাজ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান সচেতন মহল।
সম্পাদক : শাওন আমিন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোঃ গিয়াস উদ্দীন, নির্বাহী সম্পাদক : ঝড় আমিন প্রকাশক : মোঃ সোহরাব আলী
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: হালিশহর, চট্রগ্রাম। ঢাকা অফিস : বাসা নং ৫১/৩ ধানমন্ডি ৩/এ ঢাকা-১২০৯
মোবাইল : 𝟎𝟏𝟕𝟏𝟐𝟒𝟏𝟓𝟖𝟓𝟑 𝟎𝟏𝟓𝟖𝟎𝟖𝟐𝟎𝟔𝟔𝟑 𝟎𝟏𝟕𝟏𝟐𝟎𝟔𝟏𝟏𝟔𝟑 𝐄-𝐦𝐚𝐢𝐥 : 𝐬𝐡𝐚𝐰𝐨𝐧𝐚𝐦𝐞𝐞𝐧𝟓@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦