।। শহীদুল ইসলাম শহীদ।।
ঢাকায় বৈশ্বিক অর্থায়ন সংকটের প্রেক্ষিতে এনজিওদের বর্তমান অবস্থা ও করণীয় বিষয়ক মতবিনিময় সভা ১৮ অক্টোবর ২০২৫ শনিবার সকাল ১১টায় গণসাক্ষরতা অভিযানের আয়োজনে জিপিই এর সহযোগিতায় ঢাকার আগারগাঁওস্থ বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এর শৈলপ্রপাত হলরুমে ‘বৈশ্বিক ও অন্যান্য কারণে সৃষ্ট অর্থায়ন সংকটের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর বর্তমান অবস্থা ও করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন/এনজিওদের উন্নয়ন চলমান অর্থায়ন সংকট উত্তরণে সম্ভাব্য সমাধান, করণীয় ও কৌশল খুঁজে বের করতে আজকের এই আয়োজন ছিল। সভার শুরুতেই ফিলিস্তিনে শিশু, নারী ও বেসামরিক নাগরিক হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করে এবং ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করে তাঁদের সাথে একাতœতা প্রকাশ করে অভিযানের সহকর্মীদের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিশু সন্তানেরা। বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে নিয়ে তারা স্লোগান দেয় এবং একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। এটি পাঠ করেন শিক্ষার্থী সুকৃতি ইসলাম জয়িতা।
এরপর শুরু হয় মতবিনিময় সভা। সভাপতিত্ব করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধূরী। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড.ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারপার্সন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স (ব্রান্ড এন্ড মার্কেটিং) কান্ট্রি হেড বিটপী দাশ চৌধূরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাহাদাৎ হোসেন, সিপিডির রিসার্চ ডিরেক্টর ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। উন্মুক্ত আলোচনায় আরো বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কনসালটেশন কমিটির প্রধান ড. মনজুর আহমেদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ফারহানা হক, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব হাসিনা আক্তার, পিকেএসএফ এর ডিজিএম আশরাফুল হক, মাউশির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উইং এর পরিচালক ড. একিউএম শফিউল আজম, ভার্কের নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব হোসেন, ফরিদপুরের রাসিনের নির্বাহী পরিচালক আসমা আক্তার মুক্তা, সিলেটের আকবেটের নির্বাহী পরিচালক আসাদুজ্জামান সায়েম, রাজশাহীর এসেডো নির্বাহী পরিচালক রবিউল ইসলাম, নেত্রকোণার সেরার নির্বাহী পরিচালক মজিবুর রহমান, সিএসও অ্যালায়েন্স এর সেক্রেটারিয়েট টিম মেম্বার ও আইআইডির যুগ্ম পরিচালক সানজিদা রহমান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন গণসাক্ষরতা অভিযান এর উপ-পরিচালক তপন কুমার দাশ।
সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বাংলাদেশের এনজিও খাতের বর্তমান অবস্থা, বৈদেশিক অনুদান (ঙউঅ) প্রবণতা এবং টেকসই অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর পুনর্গঠন ও দারিদ্র্য বিমোচনে এনজিওগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ক্ষমতায়ন ও জলবায়ু অভিযোজনসহ নানা ক্ষেত্রে এনজিওগুলো দেশের জিডিপিতে ৫-৬% অবদান রাখছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈদেশিক সহায়তা কমে এসেছে। ওইসিডি (ঙঊঈউ) এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক অনুদান (ঙউঅ) প্রবণতা ২০২৩ সালের ৫.৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৫ সালে ৪.৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুদান হ্রাসে ৫০,০০০ উন্নয়নকর্মী চাকরি ঝুঁকিতে পড়েছেন।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, “এনজিও খাতকে এখন অভ্যন্তরীণ উৎস যেমন কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর), সামাজিক উদ্যোগ, প্রবাসী অনুদান এবং স্থানীয় তহবিল সংগ্রহের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।” তিনি টেকসই অর্থায়নের জন্য ডিজিটাল প্রজেক্ট প্রপোজাল, ফলাফলভিত্তিক অর্থায়ন ও প্রাইভেট-পাবলিক অংশীদারত্ব পদ্ধতির প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। এনজিও খাতের জন্য ন্যাশনাল এনজিও সাসটেইনিবিলিটি ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়নের আহ্বান জানান, যাতে অর্থায়নের ধারাবাহিকতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তবর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড.ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়নে এনজিওদের অসামান্য অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সাথেই স্বীকার করছি। সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে এনজিওদের যুক্ত করেই কাজ করছে এবং সেখানকার প্রশিক্ষিত কর্মীদের কাজ শেষে আপনারা নতুন প্রকল্প যুক্ত করতে পারেন। আমরা মিড-ডে মিল এর জন্য জোর করেই অর্থায়নের সংস্থান করেছি। বৈদেশিক অনুদানের বিকল্প হিসেবে সিএসআর শুধু না বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারলে যাকাত এর অর্থ নিয়েও সেবামূলক কাজগুলো করা যেতে পারে। প্রবাসীরাও বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য অর্থায়ন করতে আগ্রহী। বিভিন্ন ফিলান্থ্রফী সংগঠনও আছে যাদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করা যেতে পারে সেক্ষেত্রে এনজিওদের নিজেদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) কর্তৃক ক্ষুদ্রঋণদাতা এনজিওতে স্বতন্ত্র পরিচালক বসানোর ব্যাপারে এনজিওদের দাবির মুখে তিনি এব্যাপারে বলেন, খারাপ সংস্কার না করার চেয়ে, না করাই ভালো। এব্যাপারে এনজিওদের সাথে এমআরএ কর্তৃপক্ষের বৈঠকের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, কোভিড মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন ও যুদ্ধ বিগ্রহের কারণে আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠী এবং উন্নয়ন সহযোগীদের বৈদেশিক সহায়তা তহবিলের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। যা বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর/এনজিওদের উন্নয়ন উদ্যোগ ও মানবিক সহায়তা প্রকল্পগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের টঝঅওউ-র সহায়তায় বাংলাদেশে পরিচালিত ১০০টির বেশি প্রকল্প বন্ধ হওয়ার কারণে ২০২৫ সালে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২০,০০০ কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। বেশ কিছু এনজিওর গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম স্থবির অথবা বন্ধ হয়ে গেছে।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, প্রাইভেট সেক্টর, গণমাধ্যম, ও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত গণসাক্ষরতা অভিযানের সহযোগী সংগঠনের দেড় শতাধিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সম্পাদক : শাওন আমিন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোঃ গিয়াস উদ্দীন, নির্বাহী সম্পাদক : ঝড় আমিন প্রকাশক : মোঃ সোহরাব আলী
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: হালিশহর, চট্রগ্রাম। ঢাকা অফিস : বাসা নং ৫১/৩ ধানমন্ডি ৩/এ ঢাকা-১২০৯
মোবাইল : 𝟎𝟏𝟕𝟏𝟐𝟒𝟏𝟓𝟖𝟓𝟑 𝟎𝟏𝟓𝟖𝟎𝟖𝟐𝟎𝟔𝟔𝟑 𝟎𝟏𝟕𝟏𝟐𝟎𝟔𝟏𝟏𝟔𝟑 𝐄-𝐦𝐚𝐢𝐥 : 𝐬𝐡𝐚𝐰𝐨𝐧𝐚𝐦𝐞𝐞𝐧𝟓@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦