নিজস্ব প্রতিবেদক।।
জায়গা দখল করে মুজিবর্ষে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যার বিরুদ্ধে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরের তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ জমা দিয়েছেন এক ভুক্তভোগী।
একইসঙ্গে মামলার পর আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সরকারি এই উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন তিনি। এছাড়া এই ঘর পেতে উপকারভোগীদের কাছ থেকে লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে ইউএনওর বিরুদ্ধে।
অথচ নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি খাস জমিতে সরকারের এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর তৈরি করার কথা।
ইউএনওর এসব অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, কক্সবাজারা জেলা ও দায়রা জজ, স্থানীয় সাংসদ, দুর্নীতি দমন কমিশন, একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাসহ নানা দপ্তরে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী মোস্তাক আহম্মদ।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়ার ইউএনও দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা আদালতের আদেশ অমান্য করে আলী আকবর ডেইল মৌজার মোস্তাক আহম্মদের জমিতে মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর সরকারি খাস জমিতে নির্মাণ করার কথা থাকলেও এই ইউএনও মোস্তাকসহ অন্যদের ১ দশমিক ০৩ একর জমিতে আইন অমান্য করে চলতি বছরের ২৭ জুন থেকে আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণ করছেন। পরে ২৮ আগস্ট কক্সবাজার জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করলে ১০ দিনের মধ্যে বিবাদিদের শোকজসহ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই জমিতে সকল প্রকার কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন আদালত।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, আদালতের আদেশ অমান্য করে ওই জমিতে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক দিয়ে গৃহ নির্মাণকাজ পরিচালনা করছেন ইউএনও। এছাড়া আদালতের আদেশ মানতে রাজি না বলেও তিনি স্বীকার করেন। আদালতের আদেশ নিয়েও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যও করেন।
ছোট অপরাধের জন্য গরিব নিরীহ মানুষকে জোর করে ধরে এনে ইউএনও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রায়ই জেল-জরিমানা করেন বলেও উল্লেখ রয়েছে অভিযোগে।
উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা হওয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কেউই তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পান না।
অভিযোগ থেকে আরও জানা গেছে, ২০২২ সালের ২ নভেম্বর নিরীহ অসহায় ও গরিব লবণ চাষীদের লবণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আটক রেখে সাত লাখ টাকা আদায় করেন তিনি। সেই জরিমানা থেকে অল্প কিছু টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে অবশিষ্ট টাকা তিনি আত্মসাত করেন। বর্তমানে ওই লবণমাহালটি অন্য ব্যক্তিদের কাছে নগদ ১০ লাখ টাকায় মৌখিকভাবে চাষের জন্য দেন।
এদিকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার জন্য উপকারভোগীদের কাছ থেকে ঘর প্রতি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা ঘুষ নেন। বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শন করে ইউএনও দীপংকর বলেন, যারা অফিস খরচ বহন করতে সক্ষম তারাই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর এবং দুর্যোগ সহনীয় ঘর পাবেন।
এছাড়া কুতুবদিয়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১ম ধাপ থেকে ৩য় ধাপ পর্যন্ত সরকারি ঘর পাওয়া প্রত্যেকের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন ইউএনও। কিন্তু প্রকৃত ভূমিহীনদের নাম নেই এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের তালিকায় এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ রয়েছে, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও এলজিইডি প্রকৌশলীর বাস্তবায়িত প্রকল্পের চেক পাশ করতে স্বাক্ষরের জন্য দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যার প্রকল্পের ৫ শতাংশ ঘুষ নেওয়ার বিনিময়ে চেকে স্বাক্ষর করেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় ঠিকাদাররা। অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার-চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে বিভিন্ন কাজের কমিশন নেন তিনি।
অভিযোগে জানানো হয়, জমি রেজিস্ট্রেশন, মামলার শুনানি, রেকর্ড সংশোধন, বালু ও লবণ মাহাল ইজারা, বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আদায় করা রাজস্ব সরকারি হিসাবে জমা না দিয়া আত্মসাৎ করেন ওই ইউএনও। নিজ বাড়ি পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নিজের স্ত্রী, সন্তান, পিতা-মাতা ও ভাই-বোনের নামে বেনামে রয়েছে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ।
এসব বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সরেজমিনে তদন্ত করার অনুরোধও জানান অভিযোগকারী।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে কুতুবদিয়ার ইউএনও দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন কল রিসিভ করেননি।
প্রকাশক/সম্পাদক :- শাওন আমিন।। ব্যাবস্থাপনা সম্পাদক :- মোঃ গিয়াস উদ্দিন।। নির্বাহী সম্পাদক :- ঝড় আমীন।। প্রধান কার্যালয় :- হালিশহর, চট্রগ্রাম। মুঠোফোন :- +৮৮০১৭১২০৬১১৬৩ ঢাকা কার্যালয়:-বাসা নং ৫১/৩,ধানমন্ডি ৩/এ, ঢাকা।-১২০৯ মুঠোফোন :- +৮৮০১৭১২৪১৫৮৫৩,+৮৮০১৫৮০৮২০৬৬৩,+৮৮০১৭১২০৬১১৬৩
E-mail :- newszhor@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত. বাংলাদেশ হোস্টিং