নিজস্ব প্রতিবেদক।। প্রায় সাত মাস আগে চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর বিবিরহাট বাজার ইজারা দিতে দরপত্র আহ্বান করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। তিন ব্যবসায়ীকে নিয়ে ইজারা পেতে দরপত্রের ফরম সংগ্রহ করেন মো. নুরুল বশর। দরপত্রটি কেনা হয়েছে তিন ব্যবসায়ীর মধ্যে একজনের ভাইয়ের নামে।
দরপত্রের ফরমটি ক্রয় করতে পে-অর্ডারের মাধ্যমে ২৬০০ টাকা জমা দেন নুরুল বশর। পরে সিটি কর্পোরেশনের সর্বোচ্চ দরদাতার তালিকায় প্রথম হলে নিয়ম অনুযায়ী, প্রাপ্ত দরপত্রের মোট মূল্যের ৩০ শতাংশ অর্থ জমা দিতে বলা হয়। সেখানে তাদের তিন অংশীদারের অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে জমাও করা হয় সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগ বরাবরে। পরে দরপত্রের মোট মূল্যের বাকি টাকাও পরিশোধ করা হলে এক বছরের জন্য বিবিরহাট বাজার পরিচালনা করার ইজারা পান তারা।
কিন্তু সম্প্রতি এই ইজারাটি নিজের দাবি করে দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তিন অংশীদারের একজন সাইফুলের ভাই। তার নাম আকতার হোসেন। তিনি সাইফুল থেকে আমমোক্তার নিয়েছেন দাবি করেই হঠাৎ বাজার দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন বাকি দুই অংশীদার। এই ঘটনায় অভিযোগ গিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ থানায়। তবে এসব অভিযোগ তোয়াক্কা করছেন না আকতার।
জানা গেছে, গত ২৪ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বরাবরে একটি অভিযোগ দেন মো. নুরুল বশর। পরে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন মেয়র। এই অভিযোগে দরপত্রের অংশীদার সাইফুল ইসলামের ভাই আকতার হোসেনকে বিবাদি করা হয়। পরে একই অভিযোগটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগ, এস্টেট শাখাসহ সিএমপির উত্তর জোনের পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) বরাবরেও দেওয়া হয়।
অভিযোগে বলা হয়, চলতি বছরের ২২ ফেব্রয়ারি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুর বিবিরহাট বাজারের দরপত্রের আহ্বান করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। ওইদিন সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব শাখা থেকে দরপত্রের ফরম সংগ্রহ করেন মো. নুরুল বশর। তিনি তার অ্যাকাউন্ট থেকে ২৬০০ টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে দরপত্রের ফরম কেনেন। যার প্রমাণ হিসেবে রয়েছে পূবালী ব্যাংক বহদ্দারহাট শাখার পে-অর্ডার নম্বর ০৬৩২১১৩।
দরপত্রটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে সর্বোচ্চ দরদাতা তালিকায় প্রথম হলে সেখানে ওইদিন দরপত্রের মোট মূল্যের ৩০ শতাংশ অনুযায়ী ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে পে-অর্ডারের মাধ্যমে রাজস্ব শাখা বরাবরে জমা করেন তারা।
পরে দরপত্রটি মোটমূল্যের ১৪ লাখ টাকার মধ্যে বাকি টাকা জমা করতে বলা হলে সেখানে গত ৪ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে ৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয় তাদের দরপত্রের অংশীদার সাইফুল ইসলামের ভাই আকতার হোসেনকে। পূবালী ব্যাংকের ম্যানেজারের সামনে ওই টাকা গ্রহণ করেন আকতার হোসেন। গত ১৪ এপ্রিল নোটিশ দিয়ে বিবিরহাট বাজারটি বুঝিয়ে দেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।
গত ১৫ এপ্রিল মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে বিবিরহাট বাজার উদ্বোধন করেন তিন অংশীদার মো. নুরুল বশর, মোকতার হোসেন ও সাইফুল ইসলামের পক্ষে তার ভাই আকতার হোসেন। উদ্বোধনের পর থেকে টানা চার মাস বাজারের লাভের অংশ তিন অংশীদার সমানভাগে বণ্টনও করা হয়। এদিকে সাইফুল ইসলামের অংশের টাকা নিয়ে আসছেন তার ভাই আকতার হোসেন।
অভিযোগ বিবরণে আরও বলা হয়, গত ১২ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ২০ থেকে ২৫ জন বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে হঠাৎ বাজার পরিচালনা করতে বাধা দেন বিবাদি আকতার হোসেন। ওই সময় তিনি নিজেকে বাজারের মালিকা দাবি করে হুমকি দেন। পরে জাতীয় নাগরিক সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে পুলিশও ডেকে আনেন আকতার হোসেন। পুলিশের এসে দরপত্রের সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে থানা যেতে বলেন।
ওইদিন রাতে তিনজনই থানা গেলে সেখানে সমস্ত কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করে পুলিশ দেখে, বাজার পরিচালনায় তিনজনই বৈধ ঠিকাদার। একইসঙ্গে তাদের বলা হয়, বাজারটি তিন অংশীদার সমানভাবে পরিচালনা করাসহ লাভের অংশ সমানভাগে নিতে।
অভিযোগ সূত্রে আরও বলা হয়, গত ১৫ আগস্ট বাজারটিতে তিনজনের পক্ষ থেকে তিনজন প্রতিনিধি নিয়োগ করে টাকা উত্তোলন করা হয়। টাকা উত্তোলনের পর আকতার হোসেন তার দলবল দিয়ে বাজারের সকল টাকা নিয়ে পালানো চেষ্টা করেন। খারাপ উদ্দেশ্যে বুঝতে পেরে তাদের বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাজারের সকল দোকানদারের সাহায্য চান অপর দুই অংশীদার। পরে থানায় ফোন করে সাহায্য চান ভুক্তভোগীরা। থানা থেকে আবারও তিনজনকে বাজারের সমস্ত লাভের টাকা সমানভাবে ভাগ করে নিতে বলা হয়।
সর্বশেষ গত ১৯ আগস্ট আবারও বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে বাজারটি দখল করতে যায়। সেখানে ভুক্তভোগী নুরুল বশরকে বাজার পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে হুমকি দেওয়া হয়। এছাড়া বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। পরে বাজার থেকে উঠানো টাকার অংশের ভাগের জন্য বাকি দুই অংশীদার যোগাযোগ করলে তাদের টাকা দিবে না বলে জানান আকতার হোসেন। একইসঙ্গে তিনি বাজারের মালিক বলেও দাবি করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আকতার হোসেন বলেন, ‘আমি বাজারের মালিক। কারও সঙ্গে লিখিত কোনো চুক্তি করিনি। বাজারটি ইজারা নেওয়া হয়েছে আমার ভাই সাইফুলের নামে। বাজারের ইজারাদার শুধুমাত্র সাইফুল।’
নিজ অ্যাকাউন্ট থেকে তো পে-অর্ডারের মাধ্যমে দরপত্রের ফরম সংগ্রহ করেছেন নুরুল বশর এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কিসের নুরুল বশর? ফরম কিনেছি আমি।’
দরপত্রের মোট মূল্যের ৩০ শতাংশ টাকা তো আপনিসহ মোট তিনজন পরিশোধ করেছেন। এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কিসের পে-অর্ডার? ওই টাকা সব আমার।’
ইজারা আপনি নিলেও তিনজনের অ্যাকাউন্ট থেকে পে-অর্ডার কেন করেছেন—জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই রকম একটি অভিযোগের বিষয়ে শুনেছি। বিষয়টি আমি দেখছি।’