ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি।।ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শিবগঞ্জে জুট ট্রেডিং করপোরেশনের (জেটিসি) অধীনে ‘পাট ক্রয় কেন্দ্রের’ ৫৪ শতক জমি নামমাত্র মূল্যে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে ওই জমির আনুমানিক বাজার মূল্য ৩ কোটি টাকা হলেও, তা ৩১ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় হন্তান্তরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি জানাজানির পরও জমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
জানা যায়, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত জুট ট্রেডিং করপোরেশন ১৯৭৪ সালের ২৯ জুন ৪৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যে ঠাকুরগাঁওয়ের শিবগঞ্জে ‘পাট ক্রয় কেন্দ্র’ নির্মাণের জন্য ৫৪ শতক জমি কেনে। জেটিসির অধীনে পরিচালিত সব পাট ক্রয়কেন্দ্র ২০০০ সালের দিকে বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়। একপর্যায়ে দেশের পাটশিল্পে মন্দা দেখা দিলে কেন্দ্রগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পোঁছায়। এর মধ্যেই পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে কেন্দ্রগুলো বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয় । এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শিবগঞ্জে টেন্ডার শেষে মন্ত্রণালয় ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর ৩১ দশমিক ৭৬ লাখ টাকা মূল্যে স্থানীয় ব্যবসায়ী রাজিউল ইসলামের কাছে ওই ৫৪ শতক সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় এবং এ বিষয়ে ইচ্ছাপত্র ইস্যু করে।
শিবগঞ্জের ওই জমি বিক্রি সংক্রান্ত টেন্ডার, ইচ্ছাপত্র থেকে জানা যায়, বিক্রির শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে যে চুক্তির পুরো অর্থ ৩ কিস্তিতে ইচ্ছাপত্র ইস্যুর তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু রাজিউল ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর একটি মাত্র কিস্তিতে মোট অংকের ২৫ ভাগ অর্থাৎ ৮ লাখ টাকা দিলেও দেওয়ার পর অবশিষ্ট টাকা আর পরিশোধ করেনি। কিস্তি পরিশোধ না করায় প্রায় ৪ মাস পর ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল পাট কেন্দ্রের ওই জমি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়। দীর্ঘদিন পর চলতি বছরের ২৬ জুলাই ইচ্ছাপত্রে উল্লেখিত অর্থের অবশিষ্ট ৭৫ ভাগ টাকা পরিশোধের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আবেদন করেন রাজিউর।
বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাট ক্রয় কেন্দ্রটি ২০১১ সালের জুলাই মাসে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। পরে ২০১২ সালের ২২ ডিসেম্বর ওই জমি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে গেজেটে প্রকাশিত হয় এবং আরও পরে অর্পিত সম্পত্তির তালিকা থেকে অবমুক্ত হয়। এরপর আপিল করা হলে ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর তা খারিজ করেন আদালত। ওই সম্পত্তির মালিকানা পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুনর্বহাল থাকে। এই অবমুক্তির চিঠি গত সপ্তাহে পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে তারাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
রাজিউল ইসলাম অবশিষ্ট টাকা পরিশোধের জন্য আবেদনের তথ্য স্বীকার করে বলেন, ‘অর্পিত সম্পত্তির মামলার কারণে আগে অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করা হয়নি।
টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী টাকা পরিশোধের যে সময়সীমা ছিল, তার পরেই ওই জমিকে অর্পিত সম্পত্তি দেখিয়ে গেজেট প্রকাশ হয়। তবে কেন তিনি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ করেননি এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি রাজিউল ইসলাম।
এদিকে পাট চাষে পুনরায় গতি ফিরে আসা এবং দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় জেলায় বেশ কয়েকটি পাটকল বেসরকারিভাবে পরিচালিত হয়ে লাভজনক অবস্থানে আসায় এ অঞ্চলের চাষি ও পাট ব্যবসায়ীরা পাট ক্রয়কেন্দ্রের জমিটি নামমাত্র মূল্যে হস্তান্তরের বিরোধিতা করছেন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মাদারগঞ্জ এলাকার চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, পাট ক্রয় কেন্দ্রটি চালু থাকলে পাটের ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আবুল কাসেম বলেন, মূল্যবান এই সরকারি সম্পত্তি নামমাত্র মূল্যে হস্তান্তর না করে, পুনরায় কেন্দ্রটি চালু করে পাট ক্রয়ের উদ্যোগ নিলে একদিকে যেমন পাট চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাবেন, অন্যদিকে এই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যও গতিশীল হবে।
ওই এলাকার অপর ব্যবসায়ী নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘সরকারের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের এত দামি জমি যদি বিক্রি করতেই হয় তবে আবার টেন্ডার আহ্বান করে চলতি বাজার মূল্যে ওই জমি বিক্রি করলে সরকারের কোষাগারে কয়েকগুণ বেশি টাকা জমা হবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা অসীম কুমার মালাকার বলেন, চাহিদা ও ভালো বাজার মূল্যের কারণে এই এলাকায় পাট চাষে কৃষকরা আবার আগ্রহী হয়ে উঠছেন। জেলায় গত কয়েক বছর ধরে গড়ে ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে পাট চাষ হচ্ছে। পাট ক্রয়কেন্দ্রটি চালু হলে ভালো বাজার মূল্যে পাট বিক্রির নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে।
প্রকাশক/সম্পাদক :- শাওন আমিন।। ব্যাবস্থাপনা সম্পাদক :- মোঃ গিয়াস উদ্দিন।। নির্বাহী সম্পাদক :- ঝড় আমীন।। প্রধান কার্যালয় :- হালিশহর, চট্রগ্রাম। মুঠোফোন :- +৮৮০১৭১২০৬১১৬৩ ঢাকা কার্যালয়:-বাসা নং ৫১/৩,ধানমন্ডি ৩/এ, ঢাকা।-১২০৯ মুঠোফোন :- +৮৮০১৭১২৪১৫৮৫৩,+৮৮০১৫৮০৮২০৬৬৩,+৮৮০১৭১২০৬১১৬৩
E-mail :- newszhor@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত. বাংলাদেশ হোস্টিং