মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি।।মানিকগঞ্জের শিবালয়ে সদর উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ শাখার ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত কমিটি ঘোষণা করেছে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কমিটিতে মাদকসেবী ও বিএনপি পরিবারের সন্তানকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত শুক্রবার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এম এ সিফাত কোরাইশী সুমন ও সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলাম সাক্ষরিত ছাত্রলীগের প্যাডে সভাপতি সজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আদিত্য পন্ডিত রিশার নাম লিখে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। আগামী এক বছরের জন্য এ কমিটি অনুমোদিত বলে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই নতুন কমিটির সভাপতি সজিবুর রহমানের মাদক সেবনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে নানা মহলে চলছে নানা গুঞ্জন।
শিবালয় উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সজিবুর রহমান শিবালয় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। স্থানীয় এক প্রভাবশালী সরকারদলীয় নেতার ছত্রছায়ায় তিনি মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
এদিকে নবনির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আদিত্য পন্ডিত রিশার আপন চাচা সত্যেন কান্ত পন্ডিত ভজন শিবালয় উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। এই কমিটি ফেসবুকে ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
কলেজ ছাত্রলীগ নেতা আফিস মিয়া দৈনিক ঝড় কে বলেন, ‘আমি কলেজ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলাম। এই কমিটিতে প্রকৃত ত্যাগী নেতাদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নতুন কমিটির সভাপতি সজিবুর একজন মাদকসেবী এবং সাধারণ সম্পাদক রিশা বিএনপি পরিবারের সন্তান। আমি সভাপতি প্রার্থী ছিলাম।’
তিনি আরো বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এম এ সিফাত কোরাইশী সুমন আমার কাছে একজনের মাধ্যমে এক লক্ষ টাকা মূল্যের দুইটি ফোন দাবি করেন। বিনিময়ে শিবালয় সদর উদ্দিন কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি করার আশ্বাস দেন। আমি অপারগতা প্রকাশ করায় এ কমিটিতে আমাকে রাখা হয়নি।
’ এছাড়া টাকার বিনিময়ে বিতর্কিতদের দিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক ঝড় কে জানান, সজিবের পারিবারিক ব্যবসা হলো মাদক ব্যবসা । তার পরিবারে কয়েকজন আরিচা ঘাটের প্রথম থেকেই মাদক সেবন ও ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। নবনির্ববাচিত সভাপতির দুই ভাই মাদক মামলায় বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এখনো তারা মাদক সেবন ও বিক্রয়ের সাথে জড়িত রয়েছেন। এমন একজন মাদকসেবী ও কারবারিকে কিভাবে একটা কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি হয় বিষটা বুঝে আসে না।
শিবালয় উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাকিব হাসনাত আওয়াল বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সংগ্রামী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও জামায়াত-বিএনপিমুক্ত ছাত্রলীগের যে কমিটি করার নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগ তার ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। ছাত্রলীগের এমন আকাল পড়েনি যে মাদকসেবী ও বিএনপি পরিবারের সন্তান দিয়ে কমিটি করতে হবে। এদের চাইতে আরো যোগ্য ও ত্যাগী নেতা ছিল যাদেরকে দিয়ে কমিটি করা যেত।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এম এ সিফাত কোরাইশী সুমন বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বিশেষ সুপারিশ অনুযায়ী কমিটি দিয়েছি। সজিবের বিষয়ে মাদক সেবনের ছবিটি ভাইরাল হয়নি। হয়তো এডিট করা হতে পারে।’
ছাত্রলীগের এক প্রার্থীর কাছে পদ দেওয়ার বিনিময়ে দুইটি মোবাইল ফোন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘যে অভিযোগ করেছে ওই আসিফ নামের ছেলেই একজন বাটপার প্রকৃতির লোক। আর আপনি নিউজ করে যা করতে পারেন করেনগা। আমরা পত্রিকা দেখে সংগঠন চালাই না।’
গালিগালাজ করে তিনি আরো বলেন, ‘নিউজ করার জন্য সাংবাদিকদের মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ফাহিম খান রনি ও তার ছোট ভাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি ফুয়াদ রহমান খান উদ্বুদ্ধ করছেন। যারা এ নিয়ে নিউজ করবে আমি সেই সব সাংবাদিকের বিরুদ্বে মামলা করব।’ সাংবাদিকরা টাকার বিনিময়ে এমন নিউজ করছে বলে মন্তব্য করে তিনি ফোন রেখে দেন।
শিবালয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দস বলেন, ‘কমিটির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কমিটি দেওয়ার বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের কেউ আমাকে জানায়নি।’
এদিকে নতুন কমিটির সভাপতি সজিবুর রহমান মাদকসেবনের ছবিটি এডিট করা বলে দাবি করে বলেন, ‘একটি পক্ষ আমাকে হেয় করার জন্যই ছবিটি ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।’ পদ না পেয়ে তারা এ রকম করছে বলে দাবি করেন তিনি।