—————কামরুল হাসান খোকন——————
তৎকালীন উপ সেনা প্রধান খুনী জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসের কালো অধ্যায় ১৫ -ই আগস্ট ‘১৯৭৫ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মহান মুজিব, তার পরিবারবর্গ, নিকট-আত্মীয়-স্বজন সহ নারকীয় বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নেপথ্যে জড়িত ছিলেন ছোটবেলায় তাই একসময় জেনেছিলাম, পড়েছিলাম।
বয়সে বেড়ে উঠেছি যতো ততই সত্যের সন্ধানে চোখ বুলিয়েছি রক্তাক্ত ইতিহাস সম্বলিত পুস্তকাদি, জার্নাল, গবেষণালব্ধ বই এর পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। পনেরো অগাস্ট ‘৭৫ ইতিহাসের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড -এর অজানা অধ্যায় নিয়ে যত বেশী পাঠ-পর্যালোচনা করেছি, অধ্যয়ন করেছি এ সংক্রান্ত নানান বই, জার্নাল — দেশ-বিদেশের নামকরা ঐতিহাসিকদের গবেষনামূলক পর্যালোচনা… ততোই থলের বেড়াল বেরিয়ে এসেছে। উন্মোচিত হয়েছে প্রকৃত সত্য।
নেপথ্যের নন, পুরো হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন তৎকালীন উপ সেনা প্রধান জিয়াউর রহমান।
পনেরো অগাস্টের কাকডাকা ভোর-উত্তর পূর্ব-সকালে বত্রিশ নম্বরের বাসায় রক্তের দাগ তখনও শুকিয়ে যায়নি, সিড়িতে জাতির জনকের নিথর রক্তাক্ত দেহ, কক্ষে কক্ষে মৃতদেহের সারি, শিশু রাসেল সহ আর ও অনেকের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের চিহ্ন …. তখন অংশগ্রহণকারী হত্যাকারীদের দল জিয়াউর রহমানের বাসভবনে পুরো অপারেশনের আদ্যোপান্ত বর্ণনা করছিলেন, বিস্তারিত জেনে জিয়াউর রহমানের বলা কথা ছিলো অনেকটা এ রকম : ‘তো ! কি হয়েছে ? নেক্সট প্রেসিডেন্ট দেশ পরিচালনা করবেন।’ —- সাবলীল ভাষায় খুনীদের অভয় দিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তিনি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মহান মুজিব, তার পরিবারর্বর্গ -এর প্রতি ঠান্ডা মাথার খুনী জিয়াউর রহমানের এমন জিঘাংসা আমাদের অনুভূতিহীন করে তোলে আজও।
মানুষ এত কৃতঘ্ন হন কি করে? কিংবা রক্তলোলুপ?
পনেরো অগাস্টের নিষ্ঠুর, পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বেদনায় নীল হয় আমাদের হৃদয়। চোখ ভিজে আসে কান্নায়।
পচাত্তরের অগাস্টের খুনের দায়ে জড়িতদেরকে বিচার করা যাবে না এমন আইন করে ইনডেমনিটি দিয়ে খুনীদের বিদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে জিয়াউর রহমান।
ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ফ্যাসিস্ট জিয়াউর রহমান-এর স্ত্রী খালেদা জিয়া একানব্বই-এ সূক্ষ্ম কারচুপির নির্বাচনে আসীন হন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। অশিক্ষিত, বেপোরোয়া খালেদা জিয়া ক্ষমতা গ্রহণ করে তার স্বামীর অসমাপ্ত কাজে হাত দেন। পচাত্তরের খুনীদের রাষ্ট্রীয় স্পর্শকাতর দপ্তরগুলোতে অধিষ্ঠিত করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছুড়ে ফেলে পাক ভাবাদর্শ, ইসলামের বাতিল মতবাদ-কে পুনো:জাগরিত করে তোলার কাজে পূর্ণ মনোনিবেশ করেন। দেশকে গড়ে তোলা তার লক্ষ্য ছিল না, কিভাবে দেশরত্ন শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা আর আওয়ামী লীগ কে নিশ্চিহ্ন করা যায় এই ছিল তার ব্রত।
পনেরো অগাস্টের খুনি রশিদ ও হুদা -কে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনে জনগণের ভোট চুরি করে পার্লামেন্টে বসিয়ে স্বামীর জিঘাংসা ও নিজের জঘন্য মনোবৃত্তির প্রকাশ ঘটায় খালেদা জিয়া।
পচাত্তরের আরেক খুনী খায়রুজ্জামানকে চাকরিতে পুনর্বহাল করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাকরি দিয়ে এম্বাসেডর করে।
খালেদা জিয়া শুধু উল্লেখিত ঘৃণ্য কাজ করে ক্ষান্ত হননি, একের পর এক ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন সেসময়। এমনকি অগাষ্টের খুনী মৃত পাশা -কে প্রমোশন দেয় এবং তার পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করে।
২০০১ সনে ফের ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসে ইতিহাসের নিষ্ঠুর শাসনকার্য পরিচালনায় হাত দেয় খালেদা জিয়া। দেশজুড়ে চলে খুন, ধর্ষন, নির্যাতন-নিপীড়নের তান্ডবলীলা।
২০০৪ সালে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে জনসভা চলাকালীন তৎকালীন রাষ্ট্র-সরকার তথা খুনী খালেদা জিয়া ও তার সন্তান তারেক জিয়ার মদতে গ্ৰেনেড হামলা করে দেশরত্ন শেখ হাসিনা কে হত্যার চেষ্টায় – মহান আল্লাহর পাকের অশেষ রহমতে মাননীয় নেত্রী বেঁচে যান সেদিন। আওয়ামী লীগ নেতা আইভি রহমান সহ ২২ -জন নেতাকর্মী কে হত্যা করা হয়।
৭৪৫ -জন নেতা-কর্মী মরণঘাতী গ্ৰেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন। আহত নেতা-কর্মীদের হাসপাতালে চিকিৎসা’র সুবিধা পর্যন্ত নিতে দেয়া হয়নি, মৃতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তরে বাধা দিয়েছে।
একুশে অগাস্টের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পরেই পার্লামেন্টে খালেদা জিয়া বলেছিলো — কে শেখ হাসিনাকে মারতে যাবে? শেখ হাসিনা নিজে ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্ৰেনেড নিয়ে নিজেই গ্ৰেনেড মেরেছে।
অশিক্ষিত খালেদা জিয়া এ ধরনের মিথ্যে অপপ্রচার চালিয়েছে দীর্ঘসময় অব্দি। মিথ্যের সীমা বলতে কিছু একটা রয়েছে তো না-কি ?
খালেদার জিয়ার ছোট ছেলে কোকোর মৃত্যুর পর দেশরত্ন শেখ হাসিনা সমবেদনা জানাতে গেলে বাসার গেটে তালা দিয়ে গেট বন্ধ করে দেয়। দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে চরম অপমান করে খালেদা জিয়ার বাসায় থাকা লোকজন।
দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যা করার চক্রান্ত করা হয়েছে। একবার দু’বার নয় , অসংখ্যবার।
এতকিছুর পরেও দেশরত্ন শেখ হাসিনা উদারতা দেখিয়ে দন্ডিত খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। দেশের সবথেকে দামী হাসপাতালে চিকিৎসার সুবিধাদির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। মাননীয় নেত্রী দেশ রত্ন শেখ হাসিনা আর কতটা উদার হবেন ! মনবিক হবেন (!)
খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে সাবেক সেনাপ্রধান মুস্তাফিজুর রহমানকে ছম এ চিকিৎসা করতে দেননি। স্ট্রেচারে করে কোর্টে হাজির করা হতো। বিমানবাহিনী প্রধান জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে ঘড়ি চুরির মামলায় গ্ৰেফতার করে। হাজত-কারাগারে দু’টা কম্বল দেয়, মাটিতে শুয়ে থাকতে হয়। এমন-ই ছিল অবস্থা। সেনাপ্রধান ও বিমান বাহিনী প্রধানর প্রমোশনও কেড়ে নেয়া হয়।
মোঃ নাসিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, বাহাউদ্দীন নাসিম সহ আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশজুড়ে মেয়েদের উপর বিএনপির সন্ত্রাসী ও পুলিশ নির্যাতন চালায়। দেশরত্ন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১২টা মামলা দায়ের করে তৎকালীন বেগম জিয়ার সরকার অন্যান্যদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা দায়ের করে হয়রানি করা হয়েছে মাসের পর মাস। বছরের পর বছর।
সরকারী ও সামরিক বাহিনীর অফিসারদের চাকরিচ্যুতির ঘটনায় কত পরিবারের কস্টের জীবন। ভুলে যাই কি করে !
সন্ত্রাস, জঙ্গি, ঘুষ-দূর্ণীতি, মানি-লন্ডারিং, অগ্নিসন্ত্রাস, বৃক্ষ-নিধন, রাস্তা কেটে দেয়া, এজলাসে বোমা হামলায় জজ ও আইনজীবীদের হত্যা, হাওয়া ভবনের দূর্ণীতি, হত্যা চক্রান্ত এসব কথা কি সবাই ভুলে গেছে?
এই ধরনের মানুষকে (খালেদা জিয়া কে ) সমবেদনা জানাতে হবে?!?
কি বিচিত্র এ দেশের একধরণের মানুষের ন্যায়বোধ ! বিচারবোধ ! ছিঃ ..
আমাদের একমাত্র অহংকার মাননীয় নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আপা’র সব হারানোর দিনে সারাদেশের সবচে’ বেদনার দিনটিতে ১৫ই আগস্ট খালেদা জিয়া নিজের মিথ্যা জন্মদিন পালন করে কোন মানবিকতার, উদারতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন?
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার নামে বরাদ্দকৃত বাড়ি দখল করে পুলিশের থানা পর্যন্ত বানাতে দ্বিধা করেনি খালেদা জিয়া।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মহান মুজিবের দৌহিত্র, মাননীয় নেত্রীর জ্যেষ্ঠ সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের জন্য আমেরিকায় লোক নিয়োগ পর্যন্ত করা হয়েছিলো বেগম জিয়ার পরিকল্পনায়।
রেহানা আপার কন্যা টিউলিপের নামের সাথে মিল থাকায় নেদারল্যান্ড থেকে কম্পিউটার ক্রয় বাতিল করে দেশকে বিপদে ফেলা হয়েছিলো সেসময়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক মন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরের উপর বিএনপির নির্যাতনও ছিল অমানবিক, বর্বরোচিত।
(চলমান)