———–নুরুল্লাহ কামিল———-
বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো ও প্রভিডেন্ট ফান্ড নীতিমালা রয়েছে।যা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর থেকে আলাদা।বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন কিংবা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে সরকারি চাকরির মত আজীবন মেয়াদি কোন পেনশন ব্যবস্থা থাকে না।প্রতি মাসের বেতনের একটি অংশ জমা থাকে কর্মীর প্রভিডেন্ট ফান্ডে।যেটির সাথে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আবার ভবিষ্যত তহবিলে সমপরিমাণ টাকা সংযুক্ত করেন।বেসরকারি চাকরিতে কর্মীর নিজের ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ মিলে যে টাকা হয় তা চাকরি থেকে অব্যাহতি কিংবা অবসর গ্রহণের সময় এককালিন হাতে পান কর্মী ।এই ফান্ডের টাকা ফেলে না রেখে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আবার বিভিন্ন লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করে থাকে।যার ফলে প্রভিডেন্ট ফান্ডের আয় বাড়তে থাকে।বে সরকারি চাকরীজীবীর সমাজিক এবং অর্থনৈতিক সুরক্ষায় সহায়ক হয় এই প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা।
সরকার এবার বেসরকারী চাকুরেদের শেষ অবলম্বন এই প্রভিডেন্ট ফান্ডের আয়ের ওপর ২৭.৫ শতাংশ কর্পোরেট কর ধার্য করেছে।কিন্তু সরকারি চাকুরির প্রভিডেন্ট ফান্ড থাকছে এই করের আওতা মুক্ত। এতে একটি বড় ধরনের বৈষম্য স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়।বে সরকারি প্রতিষ্ঠানে এমনিতেই বেতন, কর্মঘণ্টা, ছুটি ইত্যাদি নানা সমস্যা নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করতে হয় কর্মীদের।শ্রম আইন থাকলেও সব সময় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান গুলোয় ঠিকমতো সুযোগ সুবিধা পান না কর্মীরা।এমনিতেও দ্রব্যমুল্যের উর্ধগতিতে নাভিশ্বাস উঠছে এসব মানুষের।দিন দিন কমে আসছে আয় সেই সাথে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেই মাসের বেতনের সব অর্থ শেষ হয়ে যায় এসব মানুষের। সঞ্চয় বলতে থাকে শুধু প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাটাই। বেসরকারি চাকরির এত কস্টে উপার্জিত টাকার প্রায় এক তৃতীয়াংশ এখন দিয়ে দিতে হবে সরকারকে।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তথ্য মতে নতুন আয়কর আইনে বে সরকারি চাকুরিজীবীর প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্রাচুয়রিটি উভয় স্থানেই বসানো হয়েছে এই কর।এই দুই করে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দেশের সকল বে সরকারি চাকুরীজীবী।অতিরিক্ত করের বোঝার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান আবার নিরুৎসাহিত হবে এ সকল ফান্ড গঠন করতে।
অতীতে সরকারি বা বে সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানেই ছিল না আয়কর।পাঁচ থেকে দশ শতাংশ কর দিতে হতো এসব অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে।যা ২০১৬ সাল থেকে উৎস কর হিসেবে নিয়ে আসছে সরকার।
নতুন আয়কর আইনে সাড়ে সাতাশ শতাংশ কর কর্তনে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। শুধুমাত্র বে সরকারি চাকুরেদের এই বিপুল পরিমাণ কর পরিশোধ করতে হবে।এতে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন এসব মানুষ।
এমনিতেও দেশে সরকারি চাকুরির সুযোগ সুবিধা বে সরকারি চাকরির থেকে অনেকাংশেই বেশি। এক্ষেত্রে বে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বেশ পিছিয়ে রয়েছেন ।শুধুমাত্র বে সরকারি চাকুরীজীবীর প্রভিডেন্ট ফান্ডে কর আরোপে এসব বৈষম্য আরো বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশের সংবিধানে সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে বলা রয়েছে।কিন্তু এক্ষেত্রে শুধু মাত্র বে সরকারি চাকুরেদের ওপর কর আরোপে একরকম ভাবে অধিকার ক্ষুন্ন করা হচ্ছে তাদের। প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর আরোপিত এই কর অনতিবিলম্বে শিথিল করা উচিত। চাকরি জীবনের শেষ সম্বল ও ভবিষ্যৎ তহবিলের আয়ের ওপর ধার্য্যকৃত বিপুল পরিমান করের ঘোষণায় উৎকন্ঠায় রয়েছেন সকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী। বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে সরকারের সুদৃষ্টির আশায় রয়েছেন দেশের বে সরকারি চাকরীজীবী সমাজ।