জয়নুল আবেদীন, হরিপুর থেকে।। মরহুম অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম ১৯৫০ সালের ১৫ ই সেপ্টেম্বর হরিপুর উপজেলার বকুয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন!তিনি পিতা মরহুম আব্দুর রহমান ও মাতা মরহুমা আমিনা খাতুন এর ৫ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের মধ্যে ৫ম সন্তান। মরহুম অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম তার শিশু কাল ও প্রাথমিক শিক্ষা জীবন নিজ গ্রাম বকুয়াতে অতিবাহিত করেন। বকুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখা পড়া করার পড় তিনি ততকালীন প্রথিতযশা স্কুল ঠাকুরগাঁও হাই স্কুলে ( এখন ঠাকুরগাঁও জেলা স্কুল) মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা জীবন অতিবাহিত করেন এবং ঠাকুরগাঁও হাই স্কুল থেকে ১৯৬৭ সালে মানবিক বিভাগে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি পীরগঞ্জ ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে ১৯৬৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর অতিক্রম করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে বি এ(সম্মান) শ্রেণীতে ভর্তি হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র জীবন শুরু কালে উনসত্তরের গন আন্দোলন মরহুম আমিনুল ইসলামকে প্রচন্ডভাবে নাড়া দিলে সেইসময়কার ছাত্র আন্দোলনের সাথে তিনি নিজেকে যুক্ত করে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সংগে জড়িয়ে পড়েন। উনসত্তরের গন অভুত্থান এর পড়ে ১৯৭০ এর নির্বাচন এবং ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম,মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি হরিপুর ফিরে এসে স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রাথমিক পদক্ষেপ সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এবং পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম – বাঙালির স্বাধীনতার সংগ্রাম- মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি আবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শিক্ষা জীবনে ফিরে যান এবং ১৯৭২ সনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে তিনি বিএ(সম্মান) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং পরবর্তীতে ১৯৭৩ সনে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ ডিগ্রী লাভ করেন।ছাত্র জীবন শেষ করে তিনি নিজ থানা হরিপুরে ফিরে এসে নিজেকে বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির রাজনীতির সাথে যুক্ত করেন এবং পাশাপাশি তিনি রানীশংকৈল ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক হিসাবে তার প্রথম কর্ম জীবন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির সংগঠন হরিপুর থানায় গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় প্রয়াত কমিউনিষ্ট নেতা কমরেড ফরহাদের উপস্থিতিতে ১৯৭৪ সালে হরিপুর উপজেলা শাখা গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মরহুম আমিনুল ইসলাম ১৯৮০ সালে ঠাকুরগাঁও সদর থানার জামালপুর জমিদার পরিবারের মরহুম নুরুল হক চৌধুরীর কন্যা মোছাঃ ইসমত আরা ইসলামের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।তিনি ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ২২ বছর হরিপুর থানা বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং অন্যান্য কমিউনিস্ট নেতাদের নিয়ে সমগ্র হরিপুরে বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির একটি শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে তিনি হরিপুর মোসলিমউদ্দিন মহাবিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তী কালে তার নিজ গ্রাম সহ আশেপাশের এলাকায় উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে তিনি এলাকার গণ্য মান্য ব্যাক্তি বর্গদেরকে নিয়ে ১৯৯৮ সালে যাদুরানী মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি দীর্ঘদিন যাদুরানী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। নিজ এলাকায় উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং সেইসময় বাংলাদেশ কৃষক লীগের ঠাকুরগাঁও শাখার সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হরিপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে ২০০১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হরিপুর শাখার সভাপতি নির্বাচিত হয়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। লোভ – লালসা, পদ-পদবী, অর্থ বিত্ত তাকে টলাতে পারেনি। তিনি তার সমগ্র রাজনৈতিক জীবনে যেসময় যা সঠিক মনে করেছেন সেই সিদ্ধান্তই গ্রহণ করে জনগণের জন্য কাজ করে গেছেন। মরহুম অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম তার স্ত্রী মিসেস ইসমত আরা ইসলাম, তার বড় ছেলে বাংলাদেশ কৃষক লীগ ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আনিসুজ্জামান শান্ত ও কনিষ্ঠ পুত্র হরিপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হরিপুর উপজেলা শাখার তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোঃ আব্দুল কাইয়ুম পুষ্প সহ অসংখ্য গুন গ্রাহী ও আত্নীয় স্বজন রেখে ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর শনিবার দিবাগত রাত ১০.৪০ মিনিটে আমাদের ছেড়ে চলে যান। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেন এবং নারী শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালান। ধীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়,ও দাখিল মাদ্রাসা, কামারপুকুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, মসজিদ – মাদ্রাসা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি অনেক উদারমনা ছিলেন। অসম্ভব রাজনৈতিক দুরদর্শিতা সম্পন্ন এবং একই সাথে একজন নির্মোহ মানুষ ছিলেন। দীর্ঘ কর্ম জীবনে মরহুমের পদচারণা ছিলো সর্বোচ্চ। তিনি দিন মজুর থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের সকল শ্রেণী পেশার সাথে আন্তরিক ভাবে মিশতেন এবং সকলের অন্তরের ভালবাসা পেয়ে তিনি দল-মত, ধর্ম,বর্ণ,গোত্র নির্বিশেষে হরিপুর বাসীর আপনজনে পরিনত হয়েছিল। অসম্ভব মানবিক ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন এই মানুষটি গত ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর শনিবার দিবাগত রাত ১০.৪০ মিনিটে তার নিজ বাস ভবন বকুয়া গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। মরহুমের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি এবং তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।আমিন