ঝড় প্রতিবেদন।। প্রবাসীদের বলা হয় রেমিট্যান্স যোদ্ধা। পরিবারের সচ্ছলতা ফেরানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন প্রবাসীরা। কিন্তু সেই প্রবাসী মারা গেলে যেন তার থাকে না কোনো মূল্য। হয়ে যান অবহেলার পাত্র। অর্থাভাবে অনেকের মরদেহ মর্গে পড়ে থাকে মাসের পর মাস। নয়তো চাঁদা তুলে মরদেহ পাঠাতে হয় দেশে।
এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপের দেশ গ্রিসে মৃত্যুবরণকারী প্রবাসীদের লাশ দ্রুত দেশে পাঠাতে কাজ করছে গ্রিস প্রবাসীদের বৃহত্তর সংগঠন বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস।
গ্রিস প্রবাসী আজির উদ্দিনের কথাই ধরা যাক। তিনি ১০ বছর ধরে দেশটিতে বসবাস করছেন। গেল কয়েক মাস আগে একটি জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন আজির। সেখানে বিভিন্ন চিকিৎসা নিয়েও জীবন যুদ্ধে জিততে পারেননি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন এই রেমিট্যান্স যোদ্ধা।
গ্রিসে তিনি দীর্ঘদিন অনিয়মিত অবস্থায় ছিলেন। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় দেশেও ফিরতে পারেননি। তার মৃত্যুর পর প্রায় ১০ দিন মরদেহ পড়ে ছিল হাসপাতাল মর্গে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় মরদেহ দেশে নেওয়ার অবস্থায় ছিল না। তাই তার পরিবার মরদেহ দেশে পাঠাতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রতি অনুরোধ জানান।
প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিনিয়তই প্রবাসে অকালে ঝরে যাচ্ছেন রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। এরপরই তাদের মরদেহ দেশে পাঠাতে পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। মরদেহ দেশে পাঠাতে পরিবহন খরচ ছাড়াই হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার খরচ আসে এক থেকে দেড় লাখ টাকা। যা বহন করতে পারেন না অনেক প্রবাসীর স্বজনরা। বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে শুধু পরিবহন খরচ বহন করা হয়। হাসপাতাল মর্গের খরচসহ সব প্রক্রিয়ার খরচ বহন করে বাংলাদেশ কমিউনিটি।
গ্রিস প্রবাসীদের মৃত্যুর পর বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের উদ্যোগে বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন মাঠে নামে মরদেহ পাঠানোর টাকা সংগ্রহের কাজে। তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে দোকানে দোকানে ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ করেন। একপর্যায়ে বাংলাদেশ কমিউনিটির সহায়তায় আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পরিবহন খরচ বহন করে মরদেহ দেশে পাঠায় দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।
এভাবেই গত সাত বছরে গ্রিস থেকে মৃত্যুবরণকারী আড়াই শতাধিক প্রবাসীর মরদেহ প্রবাসীদের উত্তোলিত চাঁদার টাকায় বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ।
তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখানে মারা যায় তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ কমিউনিটি ও বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে মরদেহ দেশে পাঠানোর জন্য আকুতি মিনতি জানানো হয়। কেউ মারা গেলে তাদের পরিবার যোগাযোগ না করলেও আমরা আমাদের দায়িত্ব মনে করে দ্রুত মরদেহ দেশে পাঠানোর চেষ্টা করি। তবে আমাদের কোনো ফান্ড না থাকায় টাকা সংগ্রহ করতে কিছু সময় লাগে। কারণ এথেন্সে কেউ মারা গেলে দূতাবাস থেকে টিকিট দেওয়ার পরও এক থেকে এক লাখ ১০/১৫ হাজারের মতো খরচ হয়। তবে কোনো প্রবাসী যদি এথেন্সের বাইরে বা তুরস্ক সীমান্তে মারা যান তখন আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার মতোও প্রয়োজন হয়। খুব কম প্রবাসীর পরিবারই তাদের নিজ খরচে মরদেহ দেশে নিয়ে যায়। বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের উদ্যোগে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে চাঁদা উত্তোলন করে মরদেহগুলো দেশে পাঠাতে সহায়তা করে।
কমিউনিটির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো ফান্ড দেওয়া হয় বা সরকারিভাবে সব খরচ বহন করে মরদেহ যদি দেশে নেওয়া হয় তখন আর এত ভোগান্তি পোহাতে হবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিট্যান্স যোদ্ধারা সারাজীবন দেশের জন্যই রেমিট্যান্স পাঠান। তাই বৈধ কিংবা অবৈধ সব প্রবাসীর মরদেহ সরকারি খরচে দেশে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।