ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি।। ঠাকুরগাঁওয়ে ‘গায়েবি’ মাদরাসার খোঁজে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার (২০ এপ্রিল) সকালে সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের নতুনপাড়ায় অভিযান চালায় ঠাকুরগাঁওয়ের দুদক সমন্বিত কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
এদিকে দুদকের অভিযানের খবর পেয়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূর থেকে চকলেট খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসেন ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।
অভিযান শেষে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজমির শরিফ মারজী জানান, অস্তিত্বহীন একটি মাদরাসা কীভাবে ইবতেদায়ি নিবন্ধিত তালিকায় এলো। আবার এমপিওভুক্ত করারও চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের টিম এ অভিযান পরিচালনা করে।
দুদক আসার খবর পেয়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূর থেকে একটি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীদের চকলেটের লোভ দেখিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। বাস্তবে এ প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষা কার্যক্রম চালু নেই। প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আগামীকাল দুদক কার্যালয়ে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৮১ সালে নতুনপাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৯৯ সালে এটি দাখিল পর্যন্ত একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে। ২০০২ সালে ইবতেদায়ি ও দাখিল শাখা একত্রিত হয়ে এমপিওভুক্ত হয়। সেই সময় ইবতেদায়ি শিক্ষক আবুল বাশার, নুরনবী ও বেলী আক্তার দাখিল শাখায় শিক্ষকতা করেন।
নতুন পাড়া ইবতেদায়ি শাখার প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম দুদক কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, প্রায় ৫০০ মিটার দূরে একই নামে একটি মাদরাসা হয়। সেটি এমপিওভুক্ত করার চেষ্টা করছে। অথচ এ প্রতিষ্ঠান আগেই সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়।
এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষক নুর ইসলাম বলেন, সম্পূর্ণ জালিয়াতি করে একটি চক্র এ গায়েবি প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা একেবারে বেআইনি।
একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা কৃষ্ণ রানী বইস্য বলেন, আমাদের ইবতেদায়ি শাখাতেই শিক্ষার্থী সংকট। তারপরও মাত্র ৫০০ মিটার দূরে কী করে একই নাম ব্যবহার করে আরেকটি প্রতিষ্ঠান তারা গড়ে ওঠে।
এদিকে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ৬ এপ্রিল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আকতার সরেজমিনে মাদরাসাটি তদন্ত করেন। পরদিন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি স্পষ্ট উল্লেখ করেন, ‘নতুনপাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা’ নামে কোনো বাস্তব কাঠামোর অস্তিত্ব নেই। সেখানে কোনো শিক্ষা কার্যক্রমও পরিচালিত হয় না।
প্রতিষ্ঠানপ্রধান হিসেবে দাবি করা শাহিনুর আলম প্রতিষ্ঠাকালীন কোনো কাগজপত্র, শিক্ষক নিয়োগের রেজুলেশন বা মাদরাসার কার্যক্রম সংক্রান্ত কোনো প্রমাণপত্র দেখাতে পারেননি। তদন্তকালে বর্তমান মাদরাসার জায়গায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয়রা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন এবং একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। তারা অবিলম্বে এ মাদরাসা জাতীয়করণ বা এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানান।
এ বিষয়ে নতুনপাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রধান মো. শাহানুর আলম জানান, এর আগে এ প্রতিষ্ঠানের যারা শিক্ষকতা করেছেন তারা নিয়মিত বেতন-ভাতা পেতেন। তারা অন্যত্রে চলে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে আমরা এলাকার কয়েকজন মিলে পুনরায় প্রতিষ্ঠানটি চালু করি।
তিনি আরও বলেন, এলাকার কতিপয় ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছেন। যা সত্য নয়। আজ হঠাৎ দুদক অভিযান পরিচালনা করে। তারা যে সমস্ত অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়েছে তা আমরা ওনাদের সামনে তুলে ধরবো