।। নুরুল্লাহ কামিল ।।
মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু এখন মহামারীর পর্যায়ে।এডিস ইজিপ্টি মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগ হয়,এই একই মশা ইয়োলো ফিভার ভাইরাস,জিকা ভাইরাস ও চিকনগুনিয়া ভাইরাসের বাহক।এই (RNA) ভাইরাসের পাঁচটি সেরোটাইপ রয়েছে। যাদের প্রত্যেকেই পূর্ণরূপে রোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম।
রাজধানী ঢাকা সহ সারা দেশে এবার পূর্বের বছর গুলোর তুলনায় ডেঙ্গু প্রকোপ বেশি।বয়স্ক, শিশু সহ সকল বয়সের মানুষই এ রোগে সমান ভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন। সংক্রামক ব্যাধী হওয়ায় একই পরিবারের এবং একই অঞ্চলে অবস্থান কৃত একাধিক ব্যাক্তির একইসাথে এ রোগ হবার আশংকা থাকে।জ্বর মাথাব্যাথা পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা নিয়ে অনেক মানুষ এখন ভর্তি হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার হাসপাতাল গুলোতে।ঢাকার বাহিরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা এখন ঘটছে অহরহ।
এমতাবস্থায় ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়য়ে এবং চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থাপনা গ্রহণের প্রয়োজন।সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমানে ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ে কাজ করা জরুরী।প্রয়োজন মত এন এস ওয়ান কিট সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং বিভিন্ন ব্যাক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে এন্টিজেন এন্টিবডি টেস্ট, সিবিসি,প্লাটিলেট কাউন্ট সহ সংশ্লিষ্ট সকল পরীক্ষা যেন সাশ্রয়ী মূল্য করা যায় তার ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
ডেংগুরোগ হলে ৭-৮দিন পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হয়। সল্প আয়ের মানুষদের জন্য ডেংগুরোগ এখন অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে।সাধারণত ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্তেরা উপসর্গবিহীন হয়ে থাকে কিংবা জ্বরের মত সামান্য উপসর্গ থাকে।বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাধারণ সর্দি এবং বমি বা ডায়রিয়া হতে পারে।দেশের বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলাগুলোতে এখন অনেক মানুষই এই ধরনের সমস্যা নিয়ে শরণাপন্ন হচ্ছেন চিকিৎসকের।সরকারি হাসপাতালে বেডের অপর্যাপ্ততা, চিকিৎসক সংকট,অপর্যাপ্ত নিরীক্ষণ এবং দক্ষ জনবল ঘাটতি সহ নানান সমস্যা রয়েছে। ব্যাক্তিমালিকানাধীন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও রয়েছে নানান সীমাবদ্ধতা।এর মাঝে ডেঙ্গু প্রকোপে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সঠিক ভাবে প্রদান করা সহজ নয়।তবে আমরা চাইলে ডেঙ্গু মোকাবেলায় সকলে সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে পারি।ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করার সহজ পদ্ধতি হলোএর বৃদ্ধির পরিবেশকে ধ্বংস করে ফেলা।বাড়ির আশেপাশের ডোবা নালা, ড্রেন পরিষ্কার রাখা , ইউনিয়ন পরিষদ,পৌরসভা বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে মশা মারার ঔষধ প্রয়োগ,সামাজিক সচেতনতা তৈরি ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা মশার বংশ বিস্তার রোধ করতে পারি।এছাড়াও পুরো শরীর ঢাকা কাপড় পরিধান করা এবং মশারী ব্যবহার করার মাধ্যমেও করা যায় কিছুটা প্রতিরোধ।
চিকিৎসকদের মতে ডেঙ্গু হবার পর ঠিকমতো চিকিৎসা গ্রহণ এবং বিশ্রামের প্রয়োজন।সারা দেশের সল্প আয়ের মানুষদের কথা চিন্তা করে স্যালাইন কিংবা জরুরী ঔষধ সহ ডেংগুরোগের সকল চিকিৎসার খরচ এখন সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখা প্রয়োজন। সেই সাথে সরকারী হাসপাতালগুলোতেও সরকার আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করবে এই প্রত্যাশা দেশের সকল মানুষের।
লেখক : -নুরুল্লাহ কামিল
পাবলিক হেলথ একটিভিস্ট
বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।