1. info@www.dailyzhornews.com : দৈনিক ঝড় :
বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ০৪:২০ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
কাপড় কিনে বাড়ি ফেরা হলোনা কলেজ ছাত্রী জেরিনের পঞ্চগড়ে শফিউল আলম প্রধানে ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করলেন ইউএনও ও পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিনিধি দল ঠাকুরগাঁওয়ে বছরে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ দলিল লেখত সমিতির আধিপত্যবাদ বিরোধী অগ্নিপুরুষ শফিউল আলম প্রধান – জাগপা গাইবান্ধায় ৬ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে আটক করেছে পুলিশ দানবীর আব্দুল কাদির মোল্লা: নরসিংদীর আলোকবর্তিকা গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক বকুল খরাদী গ্রেফতার পঞ্চগড়ে বন গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত প্রযুক্তি বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়ায় রেললাইন নয় : যেনো লাল গালিচা

লোকজ শব্দ ‘কটকটি’

প্রভাষক মো.সোহেল রানা
  • প্রকাশিত: রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৩
  • ২১৪ বার পড়া হয়েছে

।। মো. সোহেল রানা ।। 

সোনালি শৈশব, আহ! পরম তৃপ্তির। কার না মনে আছে-ফেরিওয়ালাদের কথা। মৌসুমভেদে গ্রামে দেখা যেতো হরেক রকমের ফেরিওয়ালা। খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী কাঁধে করে নিয়ে বেড়াত ফেরিওয়ালারা। ফেরিওয়ালার ঘুণ্টির শব্দের অপেক্ষায় কান পেতে থাকতাম। ঘুণ্টির শব্দ শুনলেই এক দৌড়ে যেতাম ফেরিওয়ালার কাছে। আইসক্রিম, হাওয়াই লাড়ু, দই, চিড়া, মুড়ি, শনপাপড়ি, বাদাম, চানাচুর আরো কতো কি খাদ্যের চমক থাকতো ফেরিওয়ালার কাছে। এই লোকজ খাদ্যগুলো এখন আধুনিক মোড়কে বাজারজাত হচ্ছে এবং তা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। কাউনের চাল দিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এক সময় তাদের ক্ষুধা নিবারণ করত। এখন কাউনের চাল সুস্বাদু পায়েশ তৈরির অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাতলা কাউনের ভাতের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ভর্তা ও মরিচগুঁড়ার স্বাদ ঠাকুরগাঁওবাসী কখনো ভুলতে পারবে না বলে আমি বিশ্বাস করি।

ঠাকুরগাঁওবাসী আপনাদের কি মনে আছে গ্রামে ফেরিওয়ালারা যখন এই ‘কটকটি, কটকটি’ বলে ঘুণ্টির তালে তালে চিৎকার করতো সেই দৃশ্য। ভুলা হয় না কখনো, ভুলা যায় না। কটকটি খাওয়ার সময় কার না ঠোটে গালে লেগেছে। এসব মুখরোচক খাবার খেতাম বিনিময় প্রথার মাধ্যমে। ধান, চাল, গম, অব্যবহৃত লোহা, অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক যে যেটা সংগ্রহ করতো সেটা দিয়ে খাবার নিতো। কখনো কখনো ফেরিওয়ালার সঙ্গে মজার ঝগড়াও করতাম। কারণ বিনিময়ের কোনো মাপকাঠি না থাকাতে আমরা চেষ্টা করতাম বেশি বেশি নিতে আর ফেরিওয়ালা চেষ্টা করতো কম দিতে।

এখন আসা যাক ‘কটকটি’ শব্দের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে। ব্যাকরণগত দিক থেকে ‘কটকট’ ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের দ্বিরুক্তি। যার আভিধানিক অর্থ শক্তবস্তু কাটা বা কামড় দিয়ে ভাঙার অনুকার শব্দ। আর ‘কটকট’ শব্দের সঙ্গে ‘ই’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ‘কটকটি’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। আমাদের অঞ্চলের লোকজ খাদ্য ‘কটকটি’ শক্তবস্তু এবং খাওয়ার সময় কটকট শব্দ হয় অর্থাৎ ধ্বন্যাত্মক অনুকারের সৃষ্টি হয়। এখন প্রশ্ন হলো, যে মানুষটি নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে কটকটি নামকরণ করেছেন তিনি কি অভিধান দেখে করেছেন। অবশ্যই না। বাস্তব অভিজ্ঞতাই এখানে কাজে লেগেছে। কারণ বাংলা অভিধান চর্চার ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, বাংলা অভিধান চর্চার ইতিহাস শুরু হয় অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে। আর ঠাকুরগাঁওয়ের জনসমাজে প্রাচীন কাল হতেই লোকজ খাদ্যবস্তু হিসেবে ‘কটকটি’ নামটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আধুনিক মোড়কে বন্দিকৃত খাদ্যবস্তুর আড়ালে ‘কটকটি’ নামক লোকজ খাদ্য কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে। কিন্তু শব্দটির ব্যাকরণিক ইতিহাস তৈরি হয়েছে। বিশেষ অভিজ্ঞতায় সৃষ্ট লোকজ শব্দগুলো এভাবেই টিকে থাকে লোকজসংস্কৃতির ধারক হিসেবে। তাই আসুন বলি, জয়তু ‘কটকটি’।

লেখক :-মো. সোহেল রানা
গবেষক, বাংলা বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: বাংলাদেশ হোস্টিং