———আলী সিদ্দিকী——–
শরীরটা টানটান করে দিয়েছি গো নদী
নাও এবার শুয়ে পড়ো
সাগর ডাকলে তোমায় জাগিয়ে দেবো
পরিয়ে দেবো পলির সোনালী আঁশের পোষাক
গলায় দেবো সোনালু আর বেতফুলের মালা
সঙ্গী করে দেবো শতমুখো ক্ষীণস্রোতা ঝর্ণাধারা
বিরামহীন ছুটে চলার বন্ধু হবে শাদা বকের দল
এখন তবে নাও জিরিয়ে নাও।
নিজের সকল ভূষণ সকল মাটিমাখা সুগন্ধ
খুবলে নেয়া মুখরিত জনপদ বাজার গঞ্জ
ফসলের মাঠ পাখির সাম্রাজ্য সবুজ বনভূমি
বসতভিটা ও কবরে ঘুমন্ত মানুষের আদরের ফসিল
আম জাম কাঁঠালবাগান পানের বরজ
ছুটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে জড়িয়ে ধরা গাছের গুড়ি
সবই তো যেতে হবে পেছনে ফেলে তোমায়
এখন একটু সহনশক্তি সঞ্চয় করে নাও।
এখন তো যাচ্ছো তুমি সাগরে তারপর মহাসাগরে
অনেক অনেক নদী এসে মিশেছে এই সাগর বুকে
তুমিও যাবে মুছে
যাবে তোমার পেছনে ফেলে আসা বর্ণিল পথ
উল্কাবেগে উদ্দাম যাপনের স্মৃতিময় ইতিহাস
ভুলে যাবে ছুঁয়ে ছুঁয়ে আসা হাজারো জনপদের মুখ
হারিয়ে যাবে অনেক ঘূর্ণিময় উল্লাসের শিহরণ স্মৃতি
মুছে যাবে তোমার স্বাধীন নদী নামটুকুও।
তবুও দিলাম ডাহুকের উড়ে উড়ে ডাকার দুঃখ স্মৃতি
পানকৌড়ি আর পানিবগার পুলকিত পুচ্ছ নাচ
নদীপাড়ের বেদেসংসারের উচ্চকিত প্রাণের উচ্ছ্বাস
জোছনারাতে নদীর বুকে প্রেমিকদের মৌন মুখরতা
আরো দিলাম ভিটেহারা মানুষদের ভেসে চলার গান
ভুলো না আমাকে লেখা হারিয়ে যাওয়া রুমাল
দিলাম ভরাবর্ষায় ফুঁসে ওঠা স্রোতের ভয়াল হুঙ্কার
সাগরের কাছে স্মৃতির এই সিন্দুক জমা রেখো।
শরীরটা এখন টেনে তুলেছি গো নদী
নাও উঠে পড়ো এবার
যাচ্ছো তোমার কাঙ্খিত প্রিয় সাগরের প্রসারিত বুকে
ছেড়ে যাচ্ছো প্রকৃতির শক্তিমান আকর্ষণে
যাও সাগরের রঙ ধারণ করে রচনা করো নতুন পথ
অনেক অনেক নতুন নদ-নদীকে নিয়ো বুকে ডেকে
সাগর তোমায় ডাকছে মহাসাগরের পথে,
আয় চলে আয়।
মায়ার নোঙর তুলে নিলাম আজ, যাও।