মনতোষ কুমার, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁও জেলা কারগারের অভ্যন্তরের
কেন্টিন ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ চক্র। এ চক্রের অনিয়ম, দুর্নীতি,
স্বেচ্ছাচারিতার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন জেলা কারাগারের কয়েদী আর কারা ঠিকাদারেরা। জানা
যায়, দেশের প্রতিটি কারাগারের মত ঠাকুরগাঁও কারাগারের অভ্যন্তরেও রয়েছে একটি কেন্টিন।
অর্থের বিনিময়ে এখানে কয়েদীরা খাবার খেতে পারেন। কারাগারের পানি, বিদ্যুৎ, ভবন, কর্মচারি
সবই সরকারি। কেন্টিনে যা কিছু রান্না করা হবে তা বাইরে থেকে কিনে আনা হবে এটাই নিয়ম।
কেন্টিনে রান্না করতে যে খড়ি ব্যবহার করা হয় তা বাইরে থেকে কিনে আনার বিধান রয়েছে, অথচ
কেন্টিন কর্তৃপক্ষ কারা ঠিকাদারদের সরবরাহকৃত(কয়েদিদের জন্য) বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের একটা
অংশ কারা কর্তৃপক্ষের কারো কারো যোগসাজশে অবৈধভাবে কেন্টিনে নিয়ে এসে রান্না করে সেটাই
আবার কয়েদিদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। এমন গুরতর একটি অভিযোগ পাওয়ার পর এ প্রতিবেদক
যোগাযোগ করেন কারা ঠিকাদারদের সাথে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, অভিযোগটি
সত্য। আমরা বিভিন্ন সময়ে যারা কারা ঠিকাদারি করেছি বা এখনও করছি তারা কারা কর্তৃপক্ষের
দুর্নীতির কাছে অসহায়। এখানে ঠিকাদাররা মালামাল সরবরাহ করে বিলের জন্য ৫% হারে ঘুষ দিতে
হয়। ঘুষ না দিয়ে বিল পাশ করানো অসম্ভব ব্যাপার। ঠিকাদারদের সরবরাহকৃত কয়েদিদের জন্য
বিভিন্ন খাদ্যপণ্য কেন্টিনে ব্যবহার হচ্ছে এটা জানার পরও আপনারা কেন প্রতিবাদ করছেন না ?
এমন প্রশ্ন করলে একজন ঠিকাদার বলেন এখানে আমাদের কাজ করে খেতে হয়, অনেক সময় বিল
আটকে থাকে। আমরা এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করলে বিভিন্নভাবে তারা আমাদের হয়রানি করবে।
সম্প্রতি আব্দুল করিম নামে একজন ঠিকাদারের ৮৬ কুইন্টাল জ্বালানী খড়ির বিল এসব কারণে
আটকে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অপর আর একটি সূত্র জানান, প্রতি মাসেই জেলখানায় সরবরাহকৃত
মালামালের একটা অংশ বেঁচে যেত। সেই বেচে যাওয়া মালামালগুলো জেল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারদের
মাধ্যমে ভুয়া বিল করে টাকা উত্তোলন করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার-কারা কর্তৃপক্ষ ৬০%-৪০%
ভাগাভাগি হত। জেলখানার ভেতরে কেন্টিন হওয়ার পর কোন মালামালই অবশিষ্ট থাকেনা ফলে কারা
ঠিকাদারদের নিশ্চিত ৪০% আয় কমে যায়। এরপর আবার বিলের ৫% ঘুষ দিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত
ঠিকাদারদের লাভের অংক কমে যায় ফলে ঠিকাদাররাও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সূত্রটি আরও জানান এর
আগে যখন কারাগারে তত্ত¡াবধায়ক হিসেবে ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে ছিলেন তখন কোন ঠিকাদারকেই
বিল পাশের জন্য কেউ ঘুষ দাবি করেননি। ম্যাজিস্ট্রেট যাওয়ার পর থেকেই ৫% দাবি করা শুরু
হয়েছে। এখানেই শেষ না, ম্যাজিস্ট্রেট থাকার সময় যারা ৫% না দিয়ে বিল পাশ করে নিয়ে গিয়েছেন
তাদের কাছে সে সব বিলের ৫% ঘুষ দাবি করা হচ্ছে। এছাড়াও যে সকল ঠিকাদার ৫% তাদেরকে দেয়
নাই তাদের সরবরাহকৃত মালামাল কেন্টিনে সরবরাহ নিয়ে এই খড়ির ক্রয় বিল দেখিয়ে সমুদয় টাকা
কারা কর্মকর্তারা ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। এ বিষয়ে ঠিকাদার আব্দুল করিম জানান তার ৮৬
কুইন্টাল খড়ি সরবরাহ করেও তিনি এখনও বিল পাচ্ছেন না। ঠাকুরগাঁও জেলা কারাগারের সম্প্রতি
বদলী হয়ে যাওয়া জেলার তুহিন কান্তি খান এর সাথে কথা বললে তিনি ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলে
প্রক্ষান্তরে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন তবে তিনি এও বলেন যে বাইরে থেকে খড়ি কিনে
ফেরত দিয়ে সমন্বয় করেছেন,তবে অন্যান্য মালামালের ব্যাপারে কোন কথা বলেননি। বিষয়টি নিয়ে
কথা বললে কারা ঠিকাদার মোয়াজ্জেম হোে সন, আব্দুল করিম ও কারা ঠিকাদার প্রতিনিধি সুমন
ঘোষ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন।কারা ঠিকাদার এবং সচেতন মহল মনে করেন জেলখানার
মূল ভবনের অভ্যন্তরে কারা কেন্টিন করার ফলেই এসব অনিয়ম দুর্নীতির উত্থান ঘটেছে। এর ফলে
কারাগারের কয়েদিদের জন্য সরবরাহকৃত পণ্য সামগ্রী লোকচক্ষুর অন্তরালে খুব সহজেই
কারাগারের রান্নাঘর থেকে কেন্টিনে চলে আসছে। এসব অনিয়ম দুর্নীতি আর সরকারের টাকার
আত্মসাৎ রুখতে অবিলম্বে কারাগারের মূল ভবন খেকে ক্যাম্পাসের ভেতর অন্যত্র কেন্টিন সরিয়ে
নেয়ার বিকল্প নেই। সেই সাথে ঠাকুরগাও জেলা কারাগারের ঠিকাদাররা তাদের উপর নির্ধারিত ৫%
ঘুষের নির্যাতন বন্ধেরও দাবি জানান।