
সোহরাওয়ার্দী খোকন ঠাকুরগাঁও:ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শুকানপুকুরি ইউনিয়নের লাউথুতি গ্রামের এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে সুশ্রী রানী রায়। তবে জীবনযাত্রা যতই সাধারণ হোক না কেন, স্বপ্ন কিন্তু অসাধারণ। ছোটবেলা থেকেই ব্যাট-বলের প্রেমে ডুবে থাকা এই কিশোরীর লক্ষ্য একটাই—একদিন দেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামা, একজন সফল নারী ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিতি পাওয়া।
প্রতিদিন জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সুশ্রী অনুশীলনে যান ঠাকুরগাঁও শহরের ক্রিকেট একাডেমিতে। বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চলে কঠোর অনুশীলন। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যাতায়াত—নিজস্ব কোনো যান না থাকায় প্রতিদিনই লোকাল পরিবহনে যাতায়াত করতে হতো, যেখানে দিনে খরচ হতো শতাধিক টাকা। এতে পরিবারের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়ছিল প্রতিনিয়ত।
এই বিষয়টি জানতে পারেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার খায়রুল ইসলাম। তিনি সরাসরি সুশ্রীর সঙ্গে কথা বলে তার সংগ্রামের গল্প শোনেন। এরপর বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুশ্রীকে একটি সাইকেল উপহার দেন, যাতে তার যাতায়াত সহজ হয় এবং অর্থ সাশ্রয় হয়।
সাইকেল হাতে পেয়ে আনন্দে চোখ ভিজে আসে সুশ্রীর। তার কথায়,“আমি চাই একজন ভালো ক্রিকেটার হয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে। তাদের হাসিমুখ দেখাটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য হবে।
উপজেলা প্রশাসনের এমন কাজকে সাধুবাদ জানিয়ে অনেকেই বলছেন, ক্রিকেট প্রেমী সুশ্রীর যে আগ্রহ এতে আমরা অবাক হয়েছি। তার যাতায়াতের জন ইউএনও যে সাইকেল উপহার দিয়েছেন এরকম কাজ অব্যাহত থাকলে মেধাবী ও যোগ্যরা সামনে এগিয়ে যেতে পারবে।
এদিকে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহি অফিসার খায়রুল ইসলাম বলেন, একজন নারী ক্রিকেটার হিসেবে সে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাকে আরো একটু উৎসাহ দেওয়ার জন্য আমাদের আজকের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। সে তার আগ্রহ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে এবং ঠাকুরগাঁও জেলার নাম উজ্জ্বল করবে এই কামনা করেন তিনি। সেই সাথে জনস্বার্থে এ ধরনের কাজ অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
সুশ্রী বর্তমানে ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়ালেখার পাশাপাশি ক্রিকেটকে সময় দিচ্ছেন পুরো মনোযোগ ও আত্মনিবেদন দিয়ে। একদিকে কলেজের ক্লাস, অন্যদিকে নিয়মিত অনুশীলন—এই দুইয়ের ভারসাম্য রেখে এগিয়ে চলেছেন অদম্য এই কিশোরী।
জেলার ক্রীড়ামহলে ইতিমধ্যেই সুশ্রী একটি পরিচিত নাম। অনেকেই বলছেন, তার ভেতরে রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা এবং একদিন হয়তো জাতীয় দলে খেলবেন এই মেয়ে। শুধু সময়ের অপেক্ষা।
সুশ্রীর এই জেদ, আত্মবিশ্বাস এবং নিরলস পরিশ্রম আজকের তরুণ প্রজন্মের জন্য হতে পারে এক বিশাল অনুপ্রেরণা। যেখানে এখনো অনেক মেয়ে সামাজিক প্রতিবন্ধকতায় মাঠে নামতে ভয় পায়, সেখানে সুশ্রী গড়ে তুলছে এক নতুন দৃষ্টান্ত।
হয়তো একদিন সত্যি দেশের জার্সি গায়ে, ব্যাট হাতে মাঠে নামবেন সুশ্রী রানী রায়—তখন গর্বিত হবে শুধু তার পরিবার নয়, পুরো ঠাকুরগাঁও, গর্বিত হবে বাংলাদেশ।