
।। মোঃ আব্দস সা,আদ (শুভ)।।
দীর্ঘ দের যুগ পর বান্ধবীর সাথে সাক্ষাৎ এক আবেগঘন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম ।মনে হলো অতীতের স্মৃতিগুলো নতুন করে ফিরে এসে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও গভীর হলো। সাক্ষাৎকালে পুরনো দিনের হাসি-ঠাট্টা, গল্পের স্মৃতিগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে এবং সময়ের সাথে সাথে বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হলো। অনেক দিন পর বান্ধবীর সাথে দেখা। বন্ধুত্বের এই সম্পর্ক ঠিক এমনই, সময় যতই পেরিয়ে যাক, ভালোবাসা আর আন্তরিকতা কখনো কমে না একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না জড়িত কন্ঠে কথোপকথন এরপর হাসি ঠাট্টা সব মিলিয়ে অসাধারণ একটা অনুভূতি।
রানী খালামনি হিন্দু ধর্মের হলেও আমার আম্মুর ঘনিষ্ট বান্ধবী। বিধৌত করতো নদীর কোল ঘেষে আমার আম্মুর নানাবাড়ি হওয়ায় সেখানে থাকাকালীন রানী আন্টি সাথে প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা,খেলাধুলা সেই সাথে নদীতে গোসল সহ মামার বাড়ি বেড়ানো উচ্ছ্বাসিত জীবন সহ ঝড়ের দিনে আম কুড়ানো অসাধারণ রোমাঞ্চকর সাহসিকা তাদের জীবনে ঘটেছে।
ক্ষণস্থায়ী এ জীবনে কত মধুর স্মৃতির সঞ্চার হয়, যা ক্ষণে ক্ষণে স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে। এর মধ্যে শৈশবের স্মৃতিগুলোই মানুষকে বেশি নাড়া দেয়। জীবনের কোনো এক বাঁকে এসে উপলব্ধি হয়, দুরন্ত শৈশবের দিনগুলো কতই না মধুর ছিল যা আম্মুর মুখ থেকে না শুনলে বুঝতেই পারতাম না।
এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ সময়, দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর, যুগ। অনেকবার আম্মুর সাথে তার নানা বাড়ি যাওয়ার সুবাদে জানতে পেরেছি রানী খালামনির বিয়া হয়েছে ওই করতোয়া নদীর কোল ঘেসেই দূরের এক গ্রামে। গ্রামটি অনেক বড় হলেও হালকা বসতি। নদীর তীরবর্তী মানুষগুলো জীবন জীবিকা সম্পূর্ণ নির্ভর করে করতোয়া নদী থেকেই!কেউ মাছ ধরে, কেউ নৌকা চালায়, কেউ গবাদি বসে পালন করে, কেউ আবার শুষ্ক মৌসুমী চরে নানা ধরনের শস্য ফলায়।
প্রায় ১৯ বছর আগে সর্বশেষ দেখা হয়েছিল রানী খালামনির সাথে আম্মুর।এরপর দুজনেই বৈবাহিক জীবনে পদার্পণ করায় পরিবার ও অন্যান্য দায়িত্ব পালনের জন্য শক্তি ও মনোযোগের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে ব্যক্তিগত কাজ বা শখ পূরণের জন্য সময়ের অভাব দেখা দেয়। এই ব্যস্ততা চাকরি, সন্তান পালন, এবং গৃহস্থালীর কাজসহ নানা দায়বদ্ধতার কারণে সৃষ্টি হওয়ায়, জীবনের অন্যান্য দিককে সীমিত করে।
দীর্ঘদিন থেকে এক বুক আশা নিয়ে থাকার পরে এখন থেকে প্রায় বছর খানেক আগে রানী খালা মনির ফোন নাম্বারটি সংগ্রহ করে আম্মু। শুরু হয় দুজনার কথোপকথন। সেই সাথে খালামনীর সাথে দেখা করার আগ্রহটা বেড়ে যায় আম্মুর।সেই সুবাদে খালামণি ও এবার পূজায় আম্মুকে দাওয়াত করে।
এবার যাবার পালা। আম্মুর সাথে তার বান্ধবীর বাড়িতে যাব এটা শুনেই ভিতরটা কেমন নাড়া দিয়ে উঠলো। কেন জানি নিজের ভিতর খুব ভালো লাগা শুরু হলো।
এরপর সেই শুভক্ষণ।দূর্গা পূজার পরের দিন আমি, আমার ছোট ভাই শিশির, আব্বু, আম্মুসহ খালামনির বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম আমরা। খোলা ভ্যানে চরে বিশাল সব নয়নাভিরাম সবুজ ধান ক্ষেতের বুক চিরে বয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা পিচঢালা পথ।এরপর আবার খানিকটা গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা মেঠো পথ ধরে এগিয়ে চলছি আমরা। দখিনা বাতাসের সঙ্গে কানে ভেসে আসছে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। মাঠে চরানো কিছু ঘোড়া দেখতে পেলাম সেই সাথে গরুর পালও আছে।প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্য দেখে মনে হলো কল্পনার জগতে এসেছি। অবশেষে এসে পৌঁছলাম নদীর ঘাটে।নদীর ধারে কাশফুল গুলো যেন মৃদু বাতাসে হেলেদুলে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। ওপার আমাদের জন্য অপেক্ষারত খালামণির দু সন্তান স্বাধন, শ্রাবণী দাঁড়িয়ে আছে।শ্রাবণী গ্রামের একটি মাধ্যমিকে ক্লাস সেভেনে পড়ে।আর সাধনের বয়স মাত্র দু,আড়াই বছর হবে আরকি। খালামণি নদীর ওই পারে চড়ের মধ্যেও বেশ কয়েকটি পরিবারের সাথে বসবাস করে।খালামনি ও নদীর তীরে বসে আছে আম্মুর অপেক্ষায়। আমরা নৌকায় উঠলাম!নদী পার হওয়ার সাথে সাথেই খালামনি দূর থেকে দেখে আম্মুকে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন। এরপর দুজনের কথোপকথন আলাপচারিতায় দীর্ঘ দের যুগেরও বেশি সময়ের শূন্যতার অবসান ঘটে গেল এক নিমিষেই।সেই সাথে দুই বান্ধবীর পূর্ণতা পেলো হারিয়ে যাওয়া বন্ধুত্বের সম্পর্কের।