চৌধুরী নুপুর নাহার তাজ,দিনাজপুর প্রতিনিধি।।
জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিলো সংগ্রাম আর বেঁচে থাকার লড়াই। সেই লড়াইয়ের অপর নাম দিনাজপুরের নারী সর্দার সুফিয়া বেগম।
পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে জন্ম নেওয়া সুফিয়ার শৈশব কেটেছে সীমাহীন কষ্টে। অভাব-অনটনের সংসারে ছোটবেলা থেকেই বুঝতে শিখেছিলেন জীবনের কঠিন বাস্তবতা। পরবর্তীতে বিয়ের পর তিনি স্বামী নাসিরের বাড়িতে এসে দিনাজপুরের চাউলিয়া পট্টিতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। অল্প বয়সেই স্বামী হারিয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে শুরু হয় তার টিকে থাকার লড়াই।
দুই কন্যাশিশুর ভরনপোষণ আর মায়ের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে আয়ের পথ খুঁজতে গিয়ে তিনি নামেন কঠিন শ্রমের কাজে। মাথায় ডেলি নিয়ে ইটের সুরকি, বালু ও পাথর বহন করে বাড়িঘর ও রাস্তা নির্মাণের কাজ করতেন তিনি। প্রতিদিনের সামান্য মজুরিই ছিলো তার দুই মেয়ের ভরসা। কাজের সময় মেয়েদের রেখে যেতেন মায়ের কাছে।
ধীরে ধীরে তার পরিচিতি বাড়তে থাকে। একসময় তিনি শ্রমিকদের নিয়ে একটি দল গঠন করেন। সেই দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন দিনাজপুর জেলার একমাত্র লেবার নারী সর্দার। পুরুষ-প্রধান এই শ্রমজীবী জগতে একজন নারী হয়ে নেতৃত্ব দেওয়া ছিলো নিঃসন্দেহে বিরল দৃষ্টান্ত। শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের কাজের সুব্যবস্থা ও ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে গিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন সবার আস্থার প্রতীক।
কিন্তু সময়ের স্রোতে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়েছেন সুফিয়া। নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে আজ তিনি কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন। একসময় যিনি শত শ্রমিককে নেতৃত্ব দিয়েছেন, মাথায় ডেলি নিয়ে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করেছেন, আজ তিনি নিজের জীবন বাঁচাতে সংগ্রাম করছেন।
এখন তার একটাই চাওয়া—সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা। সরকারের কাছে এবং সমাজের বিত্তবানদের কাছে আকুল আবেদন, যেন তিনি চিকিৎসা পেয়ে আবার সুস্থভাবে বাঁচতে পারেন।
দিনাজপুরের শ্রমজীবী মানুষের কাছে সুফিয়া শুধু একজন নারী নন, তিনি সাহস, আত্মত্যাগ আর সংগ্রামের প্রতীক। তার জীবনের গল্প আগামী প্রজন্মের নারীদের জন্য হয়ে থাকবে অনুপ্রেরণার আলো।