
নরসিংদী থেকে মাসুদ রানা বাবুল।। নরসিংদী জেলাজুড়ে মেঘনা নদীর বুকে ভয়ঙ্কর কালো থাবা বসিয়েছে অবৈধ বালু মাফিয়ারা। স্থানীয়দের অভিযোগ, শক্তিশালী ‘চুম্বক’ ড্রেজার (ম্যাগনেটিক ড্রেজার) ও এক্সকাভেটর (ভেকু) মেশিন ব্যবহার করে বেপরোয়াভাবে চলছে বালু উত্তোলন, যার ফলে নদীর তীর ধসে বসতভিটা ও কয়েক হাজার হেক্টর কৃষিজমি মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বারবার প্রশাসন ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান সত্ত্বেও, নেপথ্যের সিন্ডিকেট ও তাদের অবৈধ কার্যক্রম থামাতে ব্যর্থ প্রশাসন—এমনটাই দাবি করছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা। তারা অত্যন্ত শক্তিশালী মোবাইল কোট যাওয়ার আগে খবর পেয়ে যায় ,
এবং মোবাইল কোটের ম্যাজিস্ট্রেটের উপর গুলি বর্ষন করে, এলাকায় মানববন্ধন হলে জনগণকে মারপিট করে রক্তাক্ত যখন করে ।
নরসিংদীর মেঘনা নদীর বিশেষ করে গরিপুরা পয়েন্ট এলাকায় অবৈধ ‘চুম্বক’ (ড্রেজার) ব্যবহার করে বালু উত্তোলনের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। স্থানীয়রা জানান, এই শক্তিশালী যন্ত্রগুলো গভীর থেকে বালু তুলে নিচ্ছে, যা নদীর প্রাকৃতিক চ্যানেলকে দ্রুত পাল্টে দিচ্ছে এবং তীরভাগকে দুর্বল করে তুলছে। ফলস্বরূপ, নদী তীরবর্তী একাধিক গ্রাম, তাদের ঘরবাড়ি এবং ফসলি জমি প্রতি মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
আইনের মুখেও সিন্ডিকেট বেপরোয়া: অভিযান চলছে, অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে । নরসিংদীতে বর্তমানে কোন বালু মহল ইজারা নেই । নরসিংদীর শুটকি কান্দা, জগতপুর, আলোক বালি, মুরাদনগর, বাখর নগর ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে । ইতিপূর্বে আওয়ামী লীগের দিপুর চেয়ারম্যান এবং আসাদুল্লাহ বালুর উত্তোলন করত তারা পালিয়ে যাওয়ার পর সিন্ডিকেট পরিবর্তন হয়েছে ।
গত কয়েক মাসে উপজেলা প্রশাসন ও মোবাইল কোর্ট মেঘনা নদী এলাকায় একাধিক সফল অভিযান চালিয়েছে। একাধিক ড্রেজার, এক্সকাভেটর ও বাল্কহেড জব্দ করা হলেও, স্থানীয়দের গুরুতর অভিযোগ—জব্দকৃত যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত হলেও নেপথ্যে থাকা মূল সিন্ডিকেট ও প্রভাবশালীরা বরাবরই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তির যোগসাজশে তারা দ্রুতই নতুন যন্ত্রপাতি বসিয়ে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করছে। এমনকি অভিযান ঠেকাতে প্রশাসনের ওপর হামলা ও বাধা দেওয়ার চেষ্টাও ধরা পড়েছে।
পরিবেশগত বিপর্যয় ও ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস
এই অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধ বালু উত্তোলন কেবল স্থানীয় বসতিকেই নয়, নদীর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকেও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ড্রেজারের আঘাতে নদীর তলা ও তীর কেটে যাওয়ায় মাছের প্রজনন ক্ষেত্র, বিশেষত ইলিশের ডিম ছাড়ার এলাকাগুলো ধ্বংস হচ্ছে। এতে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের জীবিকা এবং সামগ্রিকভাবে অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। আইনত নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইলিশের প্রজনন সময়েও এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেমে নেই।
দাবি: কঠোর শাস্তি, জবাবদিহিতা ও তীর পুনরুদ্ধার
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও পরিবেশবাদীরা অবিলম্বে কার্যকর তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তাদের প্রধান দাবি: অবৈধ ইজারা বাতিল, নেপথ্যের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রশাসনিক ও দণ্ডবিধির আওতায় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত নদী তীর পুনর্নির্মাণের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ। তারা মনে করেন, কেবল যন্ত্রপাতি জব্দ করে এই গুরুতর পরিবেশগত ও সামাজিক অপরাধ বন্ধ করা যাবে না; প্রশাসন ও লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং কঠোর জবাবদিহিতার ব্যবস্থা ছাড়া মেঘনার অবক্ষয় থামানো অসম্ভব। নরসিংদী জেলা নদী রক্ষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ মেঘনা নদী মনিটরিং করছে সদর এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলন করলে প্রতিহত করবে বলে জানিয়েছেন একটি সূত্র । তারা প্রশাসনকে সবসময় ইনফরমেশন দিচ্ছে এবং মেঘনায় নিয়মিত স্পিডবোট দিয়ে মনিটরিং করছে ।
শেষ কথা: নরসিংদীর মেঘনা নদী এখন কেবল বালু মাফিয়াদের শিকার নয়, এটি প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং অবৈধ অর্থনৈতিক শক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। স্থানীয় জীবন, কৃষিজমি এবং নদীর পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত, কঠোর ও স্বচ্ছ প্রশাসনিক পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।