
মোঃ জাহিদ হোসেন , দিনাজপুর প্রতিনিধি ॥ ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড দিনাজপুর এর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেছেন বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের কর্মকর্তা, বিশিষ্ট গবেষক, কবি ও কথাসাহিত্যিক ড. এ. কে. এম. মাসুদুল হক।
মঙ্গলবার সকালে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মহাঃ তৌহিদুল ইসলাম নবাগত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. এ. কে. এম. মাসুদুল হক’কে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর নূর মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ কামরুজ্জামান পাইকাড়, উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ জহুরুল হক, উপ সচিব মোঃ আব্দুস সালাম, বিদ্যালয় পরিদর্শক মোঃ আমিনুল হক, চেয়ারম্যান এর একান্ত সচিব মোঃ নাসিমউজ জামানসহ শিক্ষা বোর্ডের অন্যান্য কর্মকর্ত ও কর্মচারীবৃন্দ।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ (সরকারি কলেজ-২ শাখা) কর্তৃক ১৯ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ নিয়োগাদেশ প্রদান করা হয়।
সর্বশেষ তিনি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে ২০২১ সালের ১০ আগস্ট থেকে ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে সততা, দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তিনি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট মহলে সুপ্রশংসিত হন।
ড. মাসুদুল হক সাহিত্য ও গবেষণার জগতে একটি সুপরিচিত নাম। তিনি একজন প্রথিতযশা কবি, কথাসাহিত্যিক, গবেষক ও অনুবাদক। আন্তর্জাতিক ব্লগ ও ম্যাগাজিনে তিনি নিয়মিত ইংরেজি কবিতা রচনা ও অনুবাদ করে আসছেন। আদিবাসী জীবন ও লোকসংস্কৃতি তার গবেষণার অন্যতম আগ্রহের ক্ষেত্র। তিনি বাংলা একাডেমির রিসার্চ ফেলো হিসেবে (১৯৯৭–২০০০) ড. হায়াৎ মামুদের তত্ত্বাবধানে গবেষণা পরিচালনা করেন এবং ২০০৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল নন্দনতত্ত্ব: পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশের কবিতা (১৯৪৭–১৯৯০)।সরকারি কলেজে দর্শনের শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবনের সূচনা। দীর্ঘদিন অধ্যাপনার পর তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে প্রশাসনিক দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। তিনি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ‘বাঙালি চিন্তা’ প্রকল্পের সম্পাদক এবং বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য।
সাহিত্যাঙ্গনে তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ত্রিশ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ তামাকবাড়ি, উপন্যাস দিনমুলুক এবং গবেষণাগ্রন্থ বাংলাদেশের কবিতার নন্দনতত্ত্ব, টি. এস. এলিয়ট ও অন্যান্য, বাংলা সাহিত্যে নারী প্রভৃতি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তার অবদান স্বীকৃত। ২০২০ সালের নভেম্বরে ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী পত্রিকা ‘দ্যা পয়েট’ কর্তৃক তিনি “ ইন্টারন্যাশনাল পয়েট অফ দ্যা উইক” হিসেবে সম্মানিত হন। আন্তর্জাতিক কবিতায় অবদানের জন্য ২০২১ সালে পর্তুগাল থেকে অর্জন করেন গোল্ডেন শিল্ড সম্মাননা।
এছাড়াও তিনি গদ্যসাহিত্যে বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার (২০১১), কথাসাহিত্যে চিহ্ন পুরস্কার (২০১৩, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), লোকসাহিত্যে দিনাজপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার (২০১৪) এবং অনুবাদের জন্য চর্যাপদ পুরস্কার (২০২৩) লাভ করেন। প্রবন্ধ ও গবেষণায় অবদানের জন্য তিনি রংপুর সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদ পদক (২০২৪) এবং মহীয়সী সম্মাননা (২০২৫) অর্জন করেছেন।
শিক্ষা প্রশাসন ও সাহিত্য উভয় ক্ষেত্রেই সমানভাবে দীপ্ত উপস্থিতির অধিকারী ড. মাসুদুল হকের দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে যোগদান এ অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে সংশ্লিষ্ট মহল আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।