
নিজস্ব প্রতিবেদক।। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘গ্লোবাল টিভি’র কর্তৃপক্ষের কাছে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি এবং বার্তা প্রধান (হেড অব নিউজ) নাজনীন মুন্নীকে চাকরিচ্যুত করার হুমকির অভিযোগ উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা রিফাত রশীদের বিরুদ্ধে। চ্যানেলটির একাধিক সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে জানা গেছে, দাবি না মানলে প্রতিষ্ঠানটিতে ‘প্রথম আলো’ ও ‘ডেইলি স্টার’-এর মতো অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানোর হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
গ্লোবাল টিভি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, সম্প্রতি রিফাত রশীদ ও তাঁর সঙ্গে থাকা কয়েকজন তরুণ চ্যানেলটির কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। তাঁরা চ্যানেলটির বার্তা প্রধান নাজনীন মুন্নীকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার আল্টিমেটাম দেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে তাঁরা চ্যানেল কর্তৃপক্ষের কাছে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চ্যানেলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “তাঁরা সরাসরি হুমকি দিয়ে বলেছেন, যদি নাজনীন মুন্নীকে সরিয়ে না দেওয়া হয় অথবা দাবিকৃত টাকা না দেওয়া হয়, তবে আমাদের অফিসেও আগুন দেওয়া হবে। তাঁরা ১৮ ডিসেম্বরের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের অফিসে যেভাবে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, গ্লোবাল টিভির পরিণতিও একই হবে।”
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমগুলোতে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ ট্যাগ দিয়ে চাপ সৃষ্টি করার একটি প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। গ্লোবাল টিভির ক্ষেত্রেও একই কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। চ্যানেলটির সাংবাদিকরা জানান, নাজনীন মুন্নী একজন পেশাদার সাংবাদিক। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। একাধিক গণমাধ্যমেও রিফাত রশীদ ও তাঁর অনুসারীরা একই কায়দায় হুমকি-ধমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
হুমকির ভয়াবহতা বুঝতে গত ১৮ ডিসেম্বরের ঘটনাটি সামনে আসছে। ওই রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। দুর্বৃত্তরা অফিস ভাঙচুর করে এবং আংশিক অগ্নিসংযোগ করে। গ্লোবাল টিভি কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হুমকিতে রিফাত রশীদ ওই ঘটনার উদাহরণ টেনে ভীতি সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে চ্যানেলটির সাধারণ কর্মী ও সাংবাদিকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গ্লোবাল টিভি কর্তৃপক্ষ এই ঘটনাকে স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করেছে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোনো অন্যায্য দাবির কাছে তাঁরা মাথা নত করবেন না। তবে কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে তাঁরা শঙ্কিত। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা রিফাত রশীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে বিভিন্ন সময় সমন্বয়করা দাবি করেছেন, কোনো ব্যক্তি সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করলে তাঁর দায় সংগঠন নেবে না। কিন্তু খোদ নেতার নামেই যখন অভিযোগ, তখন প্রশ্ন উঠছে আন্দোলনের স্বচ্ছতা নিয়ে।
গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও, বিভিন্ন মিডিয়া হাউজে হামলা ও হুমকির ঘটনা উদ্বেগজনক। বিশেষ করে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নাম ব্যবহার করে বা সরাসরি নেতাদের মাধ্যমে এ ধরনের চাঁদাবাজি ও হুমকি আইনের শাসনের পরিপন্থী।